কী বলব ভাই ? দেখ রাজপুত্রকে কেউ না অযত্ন করে । আর ভাই, যখন চিতার আগুনে আমার এই দেহ ছাই হয়ে যাবে, তখন আমার সেই একমুঠো ছাই কার্তিক পূর্ণিমায় কাশীর ঘাটে গঙ্গাজলে ঢেলে দিও— যেন আমাকে জন্মান্তরে আর বিধবা না হতে হয়।’ ঝরঝর করে কমলাবতীব চোখে জল পড়তে লাগল। সেইদিন সন্ধ্যাবেলা সেই অশিজন রাজভক্ত রাজপুত চন্দনের কাঠে চিত জ্বলিয়ে চারিদিকে ঘিরে দাড়াল ; শিলাদিত্যের মহিষী, রাজপুত রানী, সন্ন্যাসিনী, সতী পুষ্পবতী হাসিমুখে জ্বলন্ত চিতায় বাপ দিলেন। দেখতে-দেখতে ফুলের মতে শুন্দর পুষ্পবতীর কোমল শরীর পুড়ে ছাই হল । চারিদিকে রব উঠল—‘জয় মহারানীর জয়! জয় সতীর জয় ? কমলাবতী ঘুমন্ত গোহকে এক কোলে, তার সেই ছাই মুঠো এক হাতে নিয়ে, চোখের জল মুছতেমুছতে বীরনগরে ফিরে গেলেন ; সঙ্গে সঙ্গে সেই অশিজন রাজপুতবীর রক্ত একে ঘিরে সেদিন থেকে বীরনগরে বাসা নিলেন । চন্দ্রাবতীর রাজবানী তানেকলার গোহকে চন্দ্র বর্তীতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বল্লভপুরের তেজস্ব সেই রাজপুত-বীরের দল গোহকে কিছুতেই ছেড়ে দেননি । তার বলতেন—“আমাদের মহারানী তামাদের হাতে রাজপুত্রকে সঁপে গেলেন, তামরাই তাকে পালন করব । বল্লভপুরেব রাজকুমাব বল্লভপুরেব রাজপুতদের রাজা হয়ে এই মরুভূমিতেই থাকুন ! এই তার রাসপসাদ। গোহ সেই বীরনগরে কমলাবতীর ঘরে মানুষ হ, গ্র লাগলেন । কমলাবতী গোহকে ব্রহ্মণের ছেলের মতে নানা শস্ত্রে পণ্ডিত কবতে চেষ্টা করতেন ; কিন্তু বীরের সন্তান গোহের লেখাপড়া পছন্দ হত না, তিনি বনে-বনে, পাহাড়ে-পাহাড়ে, কোনো দিন ভীলদের সঙ্গে ভালবালকেৰ মতো, কোনো দিন-বা সেই রাজপুত-বীরদের সঙ্গে রাজার মতে, কখনো ঘোড়ায় চড়ে মরুভূমির উপর সিংহ শিকার করে, কখনো বা জাল ঘাডে বনে-বনে হরিণের সন্ধানে ঘুরে বেড়াতেন ।
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৮১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।