তখন জোনাকি জ্বলছে, বিবি ডাকঙ্গে, দূরে-দূরে দু-একটা বাঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। মাগুলিক সেই ছুরি হাতে রাতত্ত্বপুরে ভাইরাজার দরজায় ঘা দিলেন– কারো সাড়াশব্দ নেই ! ভীলরাজ ধীরে-ধীরে ভাইয়ের ঘরে প্রবেশ করলেন ; দেখলেন, তার ছোটো ভাই সামান্য ভলের মতো মাটির উপরে এক-হাতে মুখ ঢেকে পড়ে আছেন । ভীলরাজের প্রাণে যেন হঠাং ঘা লাগল ; তিনি কালো-পাথরের পুতুলটির মতো ছোটো ভাইয়ের সুন্দর শরীর মাটির উপর পড়ে থাকতে দেখে তার চোখের জল রাখতে পারলেন না ! মনে ভাবলেন আমি কী নিষ্ঠুর ! হায়, ছোটো ভাইয়ের রাজ্য পরকে দিয়েছি, আবার কিনা শত্রু ভেবে ঘুমন্ত ভাইকে মারতে এসেছি! মাণ্ডলিক কুড়ি বংসরের সেই ভীল-রাজকুমারের মাথার শিয়রে বসে ডাকলেন—ভাইয়া! একবার ডাকলেন, দুবার ডাকলেন, তারপর মুখের কাছ থেকে তার নিটোল হাতখনি সরিয়ে নিয়ে ডাকলেন—“ভাইয়া ? –কোনোই উত্তর পেলেন না । তখন বুড়ো রাজা ছোটো ভাইয়ের মুখের কাছে মুখ রেখে তার কোকড়াকোকড়া কালো চুলে হাত বুলিয়ে বললেন—ভাইয়া রাগ করেছিস ? ভাইয়া আমার সঙ্গে কথা কইবিনে ভাইয় ? আমি তোর জন্যে হিমালয়ের আধখানা জয় করে রেখেছি, সেইখানে তোকে রাজা করৰ ; তুই উঠে বস, কথা ক ! ওরে ভাই, কেন তুই এই দশ বছর আমায় ছেড়ে পাহাড়ে-পাহাড়ে ঘুরে বেড়ালি ! কেন আমার কাছে-কাছে চোখে-চোখে রক্টলিনে ভাই ? আমি সাধ করে কি রাজপুতের ছেলেকে ভালোবেসেছি ? তুই ছেড়ে গেলে আমার যে আর কেউ ছিল না ; সে সময়ে গোহ আমার শূন্য ঘর আলো করেছিল। ভাই ওঠ, আমি তোর রাজত্ব কেড়ে নিয়েছি, তাবার তোকে শত্রু বলে মারতে এসেছি, এই নে ছুরিখানা— আমার বুকে বসিয়ে দে, সব গোল মিটে যাক ’ মাগুলিক ভায়ের হাতে ছুরিখানা জোর করে গুজে দিলেন। १२
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৮৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।