চাবি দিয়ে খুলে বাইরে উকি মেরে দেখলেন— রাত্রি অন্ধকার, প্রকাণ্ড প্রকাগু পাথরের খিলান, তার মাঝে গজদন্তের কাজ করা বড়ো-বড়ো দরজাখোল – ই-ই করছে ; অত বড়ে রাজপুরী যেন জনমানব নেই! মহারানী অবাক হয়ে এক-তাতে বাপ্পাকে বুকে ধরে আর হাতে সোনার চাবির গোছ নিয়ে খোল। দরজায় দাড়িয়ে রইলেন । হঠাৎ সেই অন্ধকারে করি পায়ের শব্দ শোনা গেল ; চামড়ার জুতো পরা রাজপুত বীরের মচমচ পায়ের শব্দ নয় ; রুপোর বাকি-পরা রাজদাসীর ঝিনিঝিনি পায়ের শব্দ নয়, কাঠের খড়ম-পড় পচাত্তর বৎসরের বুড়ে রাজপুরোহিতের পটাপট পায়ের শব্দ নয়— এ যেন চোরের মতে, সাপের মতে খুসখাস, খিটখাট পায়ের শব্দ ! মহারানী ভয় পেলেন । দেখতে-দেখতে অস্তরের মতে একজন ভীলসর্দার তার সম্মুখে উপস্থিত হল ! মহারানী জিজ্ঞাসা করলেন— ‘কে তই ? কী চাস ? ভীল সর্দীর বাঘের মতো গর্জন করে বললে—“জনিসনে আমি কে ? আমি সেই দুঃখী ভীল, যার মেয়েকে তোর মহারাজা দাসীর মতে চিতোলের রাজকে দিয়ে দিয়েছে । আজ কি স্বশেস দিন । এই হাতে নাগাদিত্যের বুকে বল্লম বসিয়েচি, আর এই হাতে তাব ছেলেমৃেদ্ধ মহারানীকে দাসীর মতো বেঁধে নিয়ে যাব । মহারানীর পা থেকে মাথ। পর্যন্ত কেঁপে উঠল। 'ভগবান রক্ষ কর ।’ বলে তিনি সেই নিবেট সোনাব বড়ে-বড়ে চাবির গোছা সজোরে ভীল-সর্দারের কপালে ছুড়ে মারলেন । তুরন্ত ভীল মা রে!' বলে চিৎকার করে ঘুরে পড়ল ; মহারানী কচি বাপ্পাকে বুকে ধরে রাজপুরী থেকে বেরিয়ে পড়লেন—তার প্রাণের আধখানা মহারাত নাগ দিত্যের জন্য হাহাকার করতে লাগল, তার আধখানা এই মহাবিপদে প্রাণের বাল্পীকে রক্ষ কলবার জন্য বাস্ত হয়ে উঠল। রানী পথ চলতে লাগলেন— পাথরে পা কেটে গেল, শীতে হাত জমে গেল, অন্ধকারে বারবার পথ ভুল হতে লাগল— তবু রানী পথ চললেন। কত দূর! কত দূর – হাড়ের পথ কত দূর ? কোথায় চলে গেছে, তার যেন শেষ নেই । রানী কত পথ চললেন, ৭৯
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৯১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।