নিয়ে, একজন তামাশা দেখতে অন্তজন বা পয়সা করতে, নগেন্দ্রনগরের রাজপুত-রাজার বাড়ির দিকে মেলা দেখতে ছুটল। বাপ্পা প্রকাণ্ড বনে একলা রইলেন ; তার প্রাণের বন্ধু, দুটি ভাই– ভীল বালিয় আর দেব, দিদির হাত ধরে এই আনন্দের দিনে বাপ্পাকে কতবার ডাকল— ‘ভাই, তুই কি রাজবাড়ি যাবি ? বাপ্পা শুধু ঘাড় নাড়লেন– “না, যাব না।’ হয়তো তার মনে হয়েছিল— আমার ভাই নেই, বোন নেই, মা নেই, আমি কার হাত ধরে কাকে নিয়ে আজ কিসের আনন্দের মেলা দেখতে যাব ? কিন্তু যখন বলিয় আর দেব ভীলনীদিদির সঙ্গে-সঙ্গে হাসতে-হাসতে চলে গেল, যখন সকালের রোদ মেঘের আড়ালে ঢেকে গেল, বাপ্পার একটি মাত্র গাই চরতে-চরতে যখন মাঠের পর মাঠ পার হয়ে বনের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল, যখন বনে আর সাড়া শব্দ নেই, কেবল মাঝে-মাঝে ঝিঝির ঝিনিঝিনি, পাতার ঝুরুঝুরু, সেই সময় বাপ্পার বড়োই একাএক ঠেকতে লাগল। তিনি উদাস প্রাণে ভীলনীদিদির মুখে শোনা ভীল-রাজত্বের একটি পাহাড়ী গান, ছোটো একটি বাশের বঁশিতে বাজাতে লাগলেন । সেই গানের কথা বোঝা গেল না, কেবল ঘুমপাড়ানি গানের মতো তার বুনো স্বরটা মেঘলা দিনে বাদলা হাওয়ায় মিশে স্বপনের মতো বাপ্পার চারিদিকে ভেসে বেড়াতে লাগল ! আজি যেন তার মনে পড়তে লাগল— ঐ পশ্চিমের দিকে, যেখানে মেঘের কোলে সূর্যের আলো ঝিকিমিকি জ্বলছে, যেখানে কালো কালে মেঘ পাথরের মতো জমাট বেঁধে রয়েছে, সেইখানে সেই অন্ধকার আকাশের নিচে, তাদের যেন বাড়ি ছিল ; সেই বাড়ির ছাদে চাদের আলোয় তিনি মায়ের হাত ধরে বেড়িয়ে বেড়াতেন ; সে বাড়ি কী সুন্দর ! সে চাদের কী চমৎকার আলো! মায়ের কেমন হাসিমুখ ! সেখানে সবুজ ঘাসে হরিণছানা চরে বেড়াত ; গাছের উপরে টিয়ে পাখি উড়ে বসত ; পাহাড়ের গায়ে ফুলের গোছা ফুটে থাকত— তাদের কী সুন্দর রঙ, কী সুন্দর গল ! বাপ্পা সজল নয়নে মেঘের দিকে চেয়ে-চেয়ে বাশের বঁাশিতে ভীলের গান বাজাতে ৮২
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৯৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।