পদ্মদাসী রা তে র অন্ধ কা রে র মাঝে দাড়িয়ে সারি সারি পল্-তোলা থাম, এরই লক দিয়ে দেখা যাচ্ছে আমাদের তেতলার উত্তর-পূব কোণের ছোটে ঘরটা , এক কোণে জলছে মিটমিটে একটা তেলের সেজ। হিমের ভয়ে লাল খেরুয়ার পুরু পর্দা দিয়ে সম্পূর্ণ মোড় ঘরের তিনটে জানলাই, ঘরজোড়া উচু একখানা খাট— তাতে সবুজ রঙের মোট দিশি মশারি ফেলা রয়েছে। ঘরে ঢোকবার দরজাটা এত বড়ে যে, তার উপর দিকটাতে বাতির আলে। পৌছতে পারে নি! এই দরজার এক পাশে একটা লোহার সিন্দুক, আর তারই ঠিক সামনে কোথা থেকে একটা কাঠের খোটা হঠাৎ মেঝে ফুড়ে হাত তিনেক উঠেই থমকে দাড়িয়ে গেছে তো দাড়িয়েই আছে। এই খোটা—ঘরের মধ্যে যার দাড়িয়ে থাকার কোনো কারণ ছিল না— সেটাতে ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে দেড়হাত-প্রমাণ একটা ছেলে । খোটার মাথার কাছে এতটুকু কুলুঙ্গির মতো একটা চৌকো গর্ত, তারই মধ্যে উকি দিয়ে দেখবার ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু নাগাল পাচ্ছি নে কুলুঙ্গিটার । আলোঁর কাছে বসে স্পষ্ট দেথতে পাচ্ছি পদ্মদাসী মস্ত একটা রুপোর ঝিনুক আর গরম দুধের বাটি নিয়ে দুধ জুড়োতে বসে গেছে— তুলছে আর ঢালছে সে তপ্ত দুধ । দাসীর কালো হাত দুধ জুড়োবার ছন্দে উঠছে নামছে, নামছে উঠছে ! চারদিক সুনসান, কেবলই দুধের ধারা পড়ার শব্দ শুনছি। আর দাসীর কালে হাতের ওঠা-পড়ার দিকে চেয়ে একটা কথা ভাবছি— উচু খাটে উঠতে পারা যাবে কি না ! পর্দার ওপারে অনেক দূরে আস্তাবলের ফটকের কাছে নন্দ ফরাশের ঘর, সেখানে নোটো খোড়া বেহালাতে গৎ ধরেছে— এক দুই তিন চার, এহেক দুহি তিহিন চার। এক দুই তিন চার জানিয়ে দিলে রাত কত হয়েছে তা —অমনি তাড়াতাড়ি খানিক আধ-ঠাণ্ড দুধ কোনোরকমে আমাকে গিলিয়ে খাটের উপর তিনটে বালিশের মাঝখানটায় কাত করে ফেলে মনে মনে একটা ঘুমপাড়ানো ছড়া আউড়ে চলল আমার দাসী। আর তারই তালে তালে অন্ধকারে তার কালে হাতের রহে-রহে ছোয় ঘুমের তলায় আস্তে আস্তে আমাকে নামিয়ে দিতে থাকল !
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।