আমরা, ফুর্তি আর ধরে না । খাবার সময় হল, ডেকের উপর টেবিল-চেয়ার সাজিয়ে খাবার জায়গা করা হল । খেতে বসেছি সবাই একটা লম্বা টেবিলে । টেবিলের একদিকে হোমরাচোমরা চাইরা, আর-একদিকে আমরা ছোকরার, দীপুদা আমার পাশে । খাওয়া শুরু হল, ‘বয়’র খাবার নিয়ে আগে যাচ্ছে ওই পাশে, চাইদের দিকে, ওঁদের দিয়ে তবে তো আমাদের দিকে ঘুরে আসবে। মাঝখানে বসেছিলেন একটি চাই ; তার কাছে এলে খাবারের ডিশ প্রায় শেষ হয়ে যায়। কাটলেট এল তো সেই চাই ছ-সাতখান একবারেই তুলে নিলেন। আমাদের দিকে যখন অসে তখন আর বিশেষ কিছু বাকি থাকে না ; কিছু বলতেও পারিনে । পুডিং এল , দীপুদ বললেন, অবন, পুডিং এসেছে, খাওয়া যাবে বেশ করে । দীপুদা ছিলেন খাইয়ে, আমিও ছিলুম খাইয়ে । পুডিং-হাতে বয় টেবিলের একপাশ থেকে ঘুরে ঘুরে যেই সেই চাইয়ের কাছে এসেছে, দেখি তিনি অর্ধেকের বেশি নিজের প্লেটে তুলে নিলেন । ওম, দীপুদ আর আমি মুখ চাওয়াচা ওয়ি করতে লাগলুম। দীপুল বললেন, হল আমাদের আর পুডিং খাওয়া ! সত্যি বাপু, অমন জাইগ্যানটিক খাওয়া আমরা কেউ কখনো দেখিনি । ওই রকম খেয়ে খেয়েই শরীরখানা ঠিক রেখেছিলেন ভদ্রলোক ! বেশ শরীরট। ছিল তার বলতেই হবে । দীপুদা শেষটায় বয়কে টিপে দিলেন, পাবারটা আগে যেন আমাদের দিকেই অমে। তারপর থেকে দেখতুম, দুটাে করে ডিশে খাবার আসত। একটা বয় ও দিকে খাবার দিতে থাকত আর-একটা এ দিকে । চোখে দেখে না খেতে পাওয়ার জন্য আর আপসোস করতে হয়নি আমাদের । নাটোর তো পৌছান গেল। এলাহি ব্যাপার সব। কী সুন্দর সাজিয়েছে বাড়ি, বৈঠকখানা। ঝাড়লণ্ঠন, তাকিয়া, ভালো ভালো দামী ফুলদানি, কার্পেট, সে সবের তুলনা নেই– যেন ইন্দ্রপুরী । কী আস্তবিক আদর্যত্ব, কী সমারোহ, কী তার সব ব্যবস্থা । একেই বলে রাজসমাদর। সব-কিছু তৈরি হাতের কাছে। চাকর-বাকরকে সব শিখিয়ে-পড়িয়ে ঠিক করে রাখা হয়েছিল, না চাইতেই সব জিনিস কাছে এনে দেয়। ধুতি-চাদরও দেখি আমাদের জন্য পাট-করা সব তৈরি, বাক্স আর খুলতেই হল না । তখন বুঝলুম, মোটঘাটের জন্য আমাদের ব্যগ্রতা দেখে ওখানকার লোকগুলি কেন, হেসেছিল ।
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১২০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।