পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পার্লামেণ্টারি বক্তা – তিনি শেষটায় উঠে বাংলায় করলেন বক্তৃত । কী সুন্দর তিনি বলেছিলেন। যেমন পারতেন তিনি ইংরেজিতে বলতে তেমনি চমৎকার তিনি বাংলাতেও বক্তৃতা করলেন । আমাদের উল্লাস দেখে কে, আমাদের তো জয়জয়কার । কনফারেন্সে বাংলা ভাষা চলিত হল। সেই প্রথম আমরা পাবলিক্‌লি বাংলা ভাষার জন্য লড়লুম। যাক, আমাদের তো জিত হল ; এবারে প্যাণ্ডেলের বাইরে এসে একটু চা খাওয়া যাক। বাড়িতে গিয়েই চ খাবার কথা, তবে ওখানেও চায়ের ব্যবস্থা কিছু ছিল । নাটোর বললেন, কিন্তু গরম গরম সন্দেশ আজ চায়ের সঙ্গে খাবার কথা আছে যে অবনদ। আমি বললুম, সে তে হবেই, এটা হল উপরি-পাওনা, এখানে একটু চ খেয়ে নিই তো আগে । এখনকার মতো তখন আমাদের খাও খাও বলতে হত না । হাতের কাছে খাবার এলেই তলিয়ে দিতেম। চায়ের পেয়াল হাতে নিয়ে এক চুমুক দিয়েছি কি, চার দিক থেকে দুপদুপ দুপদুপ শব্দ । ও কী রে বাবা, কামান-টামান কে ছুড়ছে, ৰোম নাকি ! না বাজি পোড়াচ্ছে কেউ । হাতি খেপল না তো ? ওম, আবার দুলছে যে দেখি সব – পেয়ালা হাতে যে যার ডাইনে বায়ে দুলছে, প্যাণ্ডেল দুলছে। বহরমপুরের বৈকুণ্ঠবাবু — তিনি ছিলেন খুব গল্পে', অতি চমৎকার মানুষ – তাড়াতাড়ি তিনি প্যাণ্ডেলের দড়ি দু হাতে দুটো ধরে ফেললেন। দড়ি ধরে তিনিও দুলছেন। কী হল, চার দিকে হরিবোল হরিবোল শব্দ। ভূমিকম্প হচ্ছে। যে যেখানে ছিল ছুটে বাইরে এল, হুলুস্কুলু ব্যাপার – শাখ-ঘণ্টা আর হরিবোল হরিবোল ধ্বনিতে একটা কোলাহল বাধল, সেই শুনে বুক দমে গেল। কাপুনি আর থামে না, থেকে থেকে কাপছেই কেবল । কিছুক্ষণ কাটল এমনি । এবারে সব বাড়ি যেতে হবে। রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ একটা চওড়া ফাটল । এই বারান্দাটার মতো চওড়া যেন একটা খাল চলে গেছে । অনেকে লাফিয়ে লাফিয়ে পার হলেন, আমি আর লাফিয়ে যেতে সাহস পাই নে। ফাটলের ভিতর থেকে তখনো গরম ধোয় উঠছে। ভয় হয় যদি পড়ে যাই কোথায় যে গিয়ে ঠেকব কে জানে। সবাই মিলে ধরাধরি করে কোনো রকমে তো ও পারে টেনে তুললে আমাকে ৷ এগোচ্ছি >> •