আস্তে আস্তে। আশু চৌধুরী ছিলেন আমাদের দলেরই লোক, বড়ে নার্ভাস, তিনি হাপাতে হাপাতে এসে হাত-পা নেড়ে বললেন, ওদিকে যাচ্ছ কোথায় । টেরিবল বিজনেস, একেবারে দ’ পড়েছে সামনে । আমি বললুম, দ’ কী। তিনি বললেন, আমি দেখে এলুম নদী উপছে এগিয়ে আসছে। আমি বললুম, দূর হোকগে ছাই! ভাবলুম কাজ নেই বাড়ি গিয়ে চলে। সব রেল-লাইনের দিকে, উচু আছে, ডুববে না জলে । চলতে চলতে এই-সব বলাবলি করছি, এমন সময় লোকজন এসে খবর দিলে, চলুন রাজবাড়ির দিকে, ভয় নেই কিছু । রাস্তায় আসতে আসতে দেখি কত বাড়িঘর ভেঙে ধূলিসাৎ হয়েছে। পুকুরপাড়ে বড়ো কুন্দর পুরোনো একটি মন্দির ছিল, কী সুন্দর কারুকাজ-করা । নাটোরের বড়ো শখ ছিল সেই মন্দিরটির একটি স্কেচ করে দিই ; বলেছিলেন, অবনদ, এটা তোমাকে করে দিতেই হবে । আমি বলেছিলুম, নিশ্চয়ই, আজ বিকেলেই এই মন্দিরটির একটি স্কেচ করব । পথে দেখি সেই মন্দিরটির কেবল চূড়োটুকু ঠিক আছে, আর বাদবাকি সব গুড়িয়ে গেছে। মন্দিরটির উপরে চূড়োটুকু ডাটভাঙা কারুকার্য-করা রাজছত্রের মতো পড়ে আছে। নাটোরের বৈঠকখানা ভেঙে একেবারে তচনচ, । আহ, এমন সুন্দর করে সাজিয়েছিলেন তিনি। ঝাড়লণ্ঠন ফুলদানি সব গুড়ে গুড়ে ঘরময় ছড়াছড়ি। রাজবাড়ির ভিতরে খবর গেছে আমরা সব প্যাণ্ডেল চাপা পড়েছি, রানীম কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছেন। তাকে অনেক বুঝিয়ে ঠাণ্ড করা হয় যে আমরা কেউ চাপ পড়ি নি, সবাই সশরীরে বেঁচে আছি। কোথায় গেল গরম সন্দেশ খাওয়া । সেই রাত্রে বাঈজীর নাচ হবার কথা ছিল । নাটোর বলেছিলেন এখানে নাচ দেখে যেতে— সব জোগাড়যন্তোর করা হয়েছিল। চুলোয় যাকগে নাচ, বৈঠকখানা তো ভেঙে চুরমার । চার দিকে যেন একটা প্রলয়কাণ্ড হয়ে গেছে। সব উৎসাহ আমাদের কোথায় চলে গেল। কলকাতায় মা আর সবাই আমাদের জন্য ভেবে অস্থির, আমরাও করি তাদের জন্য ভাবনা । অথচ চলে আসবার উপায় নেই , রেললাইন ভেঙে গেছে, নদীর উপরের ব্রিজ ঝুঝঝুরে অবস্থায়, টেলিগ্রাফের লাইন নষ্ট। তবু কী ভাগ্যিস আমাদের একটি তার কী করে মার কাছে এসে S X S
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১২৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।