টেনে তুলে বাপ বাপ করে নদী পেরিয়ে ও পারে উঠে গেলুম। ও পারে গিয়ে দেখি চাইরা তখন দু-এক পা করে এগোচ্ছেন ব্রিজের উপর দিয়ে। রেলগাড়ি যায় যে ব্রিজের উপর দিয়ে তা দেখেছে তো ? একখানা করে কাঠ আর মাঝখানে খানিকটা করে ফাক। ঝরঝরে ব্রিজ, তার পরে ওই রকম থেকে থেকে ফাক— পা কোথায় ফেলতে কোথায় পড়বে। চাইর তো দু-পা এগিয়েই পিছোতে শুরু করলেন । ব্রিজের যা অবস্থা আর এগোতে সাহস হল না তাদের। যেই-না চাইরা পিছন ফিরলেন, আমাদের এ পারে রব উঠল— ঘুরেছে, ঘুরেছে। আরে কী ঘুরেছে, কে ঘুরেছে। সবাই ফিসফাস করছি— চাইরা ঘুরেছে, ঘুরেছে, ঘুরেছে। মহাফুতি আমাদের । তার পর আর কী, দেখি আস্তে আস্তে তারা নদীর দিকে নেমে আসছেন। সাহেবি সাজ তো আগেই ঘুচেছিল, এবার সাহেবিয়ানা ঘূচল । জুতোমোজা খুলে প্যাটুলুন টেনে তুলতে তুলতে চাইরা নদী পার হলেন । আমরা ঠিক করলুম ট্রেনের প্রথম কামরাটা নিতে হবে আমাদের দখলে । রবিকাকাকে নিয়ে আমরা আগে আগে এগিয়ে চললুম। প্রথম কামৱায় আমরা বন্ধুবান্ধবরা মিলে যে যার বিছান পেতে জায়গা জুড়ে নিলুম। দীপুদ দু বেঞ্চের মাঝখানে নীচে বিছান করে হাত-পা ছড়িয়ে লঙ্গ তয়ে শুয়ে পড়লেন । রবিকাকাও বেঞ্চের এক পাশে বসে কাউকে ওঠানামা করতে দিচ্ছেন না পাছে জায়গা বেদখল হয়ে যায়। বৈকুণ্ঠবাবু ছিলেন খুব গল্পে মানুষ তা আগেই বলেছি, তাকে নিলুম ডেকে আমাদের কামরায়— বেশ গল্প শুনতে শুনতে যাওয়৷ যারে। চাইদের জব্দ করে আমরা তো খুব খুশি । রবিকাকাও যে মনে মনে ওদের উপর চটেছিলেন মুখে কিছু না বললেও টের পেলুম তা । একজন পাড়াগেয়ে সাহেব, রবিকাকার বিশেষ বন্ধু ছিলেন তিনি, খুব চালের মাথায় ঘোরাঘুরি করছেন আর মুখ বেঁকিয়ে বাকী ইংরেজিতে খোজ নিচ্ছিলেন আমাদের কামরায় জায়গা আছে কি না । রবিকাক যেন চিনতে পারেন নি এমনি ভাব করে চুপ করে বসে রইলেন। দীপুদা শুয়ে ছিলেন- পিটুপিট করে তাকিয়ে দেখে নিলেন কে কথা কইছে। দেখেই তিনি বলে উঠলেন, আরে, তুই কোখেকে । অমুক জায়গার অমুক না তুই । আর যায় কোথায়— কোথায় গেল তার চাল, কোথায় গেল তার সাহেবিয়ান, ধরা পড়ে যেন চপসে এতটুকু হয়ে গেলেন । Y S 8
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১২৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।