আমরা দাড়িয়ে দেখছি বারান্দ থেকে গাছের সঙ্গে একটা মোট দড়ি বাধt হয়েছে। বলডুইন সাহেব, আমরা বলতুম ব্লণ্ডিন সাহেব, দড়ার উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে গেলেন ; একটা চাকার মতে কী যেন তাও পা দিয়ে ঠেলে ঠেলে গড়িয়ে নিলেন। চার দিকে বাহবা রব । বঁাশৰাজির বেদেনী ছিল কয়েকজন মেলাতে ; তারা বললে, ও আর কী বাহাদুরি। খাজকাটা জুতো পরে দড়ার উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া তো সহজ । আমরা খালি পায়ে হঁটিতে পারি। এই বলে বেদেনীর কয়েকজন পায়ের নীচে গোরুর শিঙ বেঁধে সেই দড়ার উপর দিয়ে হেঁটে নেচে সবাইকে তাকৃ লাগিয়ে দিলে। কোথায় গেল তার কাছে ব্লণ্ডিন সাহেবের রোপ-ওয়াকিং | এই-সব দেখতে দেখতে তন্ময় হয়ে গেছি, এমন সময় চারি দিকে মার-মার মার-মার হৈ-হৈ পালা-পালা রব। যে যেদিকে পারছে কেউ পাচিল টপকে কেউ রেলিং বেয়ে ফটকের নীচে গলিয়ে ছুটছে, পালাচ্ছে । আমরা ছেলেমানুষ, কিছু বুঝি না কী ব্যাপার, হকচকিয়ে গেলুম। রামলাল আমাদের হাত ধরে টানতে টানতে দৌড়ে ফষ্টকের কাছে নিয়ে গেল। ফটক বন্ধ, লোহার গরাদ দেওয়া, খোলা শক্ত। তখনো চার দিকে হুড়োছড়ি ব্যাপার চলছে। সঙ্গে ছিলেন কেদার মজুমদার— ছোটদিদিমার ভাই, আমরা বলতুম কেদারদা— আর ফটকের উপর ছিলেন খামবাবু, জ্যোতিকাকামশায়ের শ্বশুর। অসম্ভব শক্তি ছিল তাদের গায়ে। কেদারদা দু-হাতে আমাদের ধরে এক এক ঝটকায় একেবারে ফটক টপকে ও ধারে খামবাবুর কাছে জিন্মে করে দিচ্ছেন। স্বর্ণবাঈ ছিল সেকালের প্রসিদ্ধ বাঈজী, তারই জন্ত কী একটা হাঙ্গামার সূত্রপাত হয় । সেই আমাদের হিন্দুমেলাতে শেষ যাওয়া । তার পরও কিছুকাল অবধি হিন্দুমেলা হয়েছে, কিন্তু আমাদের আর যেতে দেওয়া হয় নি। হিন্দুমেলা, সে প্রকাণ্ড ব্যাপার তখনকার দিনে । তার অনেক পরে হিন্দুমেলারই আভাস দিয়ে মোহন-মেলা, কংগ্রেসমেলা, এ মেলা সে মেলা হয়, কিন্তু অতবড় নয় । হিন্দুমেলার উদ্বেশুই ছিল ভারত প্রতি ও আজকাল তোমাদের যে কথা হয়েছে কৃষ্ট— সেই কৃষ্টর উপর তার প্রতিষ্ঠা ছিল। কিন্তু বাঙালির যা বরাবর হয়, শেষটায় মারামারি করে কৃষ্টি কেষ্ট পায়, হিন্দুমেলারও তাই হল। নবযুগের গোড়াপত্তন করলেন, নবগোপাল মিভির। চার দিকে ভারত, 〉 >br
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৩১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।