ভারত— ‘ভারতী’ কাগজ বের হল । বঙ্গ বলে কথা ছিল না তখন। ভারতীয় ভাবের উৎপত্তি হল ওই তখন থেকেই, তখন থেকেই সবাই ভারত নিয়ে ভাবতে শিখলে । তার পর অনেক কাল পরে, বাবামশায় তখন মারা গেছেন, নবগোপাল মিত্তিরের বৃদ্ধ অবস্থা, তখনে তার শখ একটা-কিছু ন্যাশনাল করতে হবে। আমরা তখন বেশ বড়ো হয়েছি, একদিন নবগোপাল মিত্তির এসে উপস্থিত ; বললেন, একটা কাণ্ড করেছি, দেশ সার্কাস পার্টি খুলেছি। ও ব্যাটারাই সার্কাস দেখাতে পারে, তার আমরা পারিনে, তোমাদের যেতে হবে । আমি বললুম, সে কা কথা, সার্কাস পাটি ! মেম যে ঘোড়ার পিঠে নাচে, সে কোথায় পাবেন আপনি ? তিনি বললেন, হ্যা, আমি সব জোগাড়-যন্তোর করেছি, শিখিয়েছি, তৈরি করেছি কেমন সব দেখবে’থম । গেলুম আমরা নবগোপাল মিত্তিরের দেশী সার্কাস পার্টিতে । না গিয়ে পারি? একটা গলিজ জায়গা ; গিয়ে দেখি ছোট একখানা তাবু ফেলেছে, কয়েকখানা ভ}ঙ বেঞ্চি ভিতরে, আমরা ও আরো কয়েকজন জানাশোনা ভদ্রলোক বসেছি। সার্কাস শুরু হল । টুকিটাকি দুটো-একটা খেলার পর শেষ হবে ঘোড়াৱ খেলা দেখিয়ে । দেশী মেয়ে ঘোড়ার খেলা দেখাবে । দেখি কোথেকে একটা ঘোড় হাড়গোড়-বের করা ধরে আনা হয়েছে, মেয়েও একটি জোগাড় হয়েছে, সেই মেয়েকে সার্কাসের মেমদের মতো টাইট পরিয়ে সাজানো হয়েছে । দেশ মেয়ে ঘোড়ায় চেপে তো খানিক দৌড়বাপ করে গেলা শেষ করলে । এই হল দেশী সার্কাস । নবগোপাল মিত্তির ওই পর্যন্ত করলেন, দেশী সার্কাস খুলে দেশী মেয়েকে দিয়ে ঘোড়ার খেলা দেখালেন । কোথায় হিন্দুমেলা আর কোথায় দেশী সার্কস। সারা জীবন এই দেশী দেশী করেই গেলেন, নিজের যা-কিছু টাকাকড়ি সব ওইতেই খুইয়ে শেষে ভিক্ষেশিক্ষে করে সার্কাস দেখিয়ে গেলেন । সেই স্রোত চলল। তার অনেক দিন পরে এলেন রামবাৰু। তারও নবগোপাল মিত্তিরের মতোই ন্যাশনাল ধাত ছিল । তিনি এসে বললেন, বেলুনে উড়ব, ওরাই কেবল পারে আর আমরা পারব না ? Σ Σ Σ»
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৩২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।