দেখতে হেসে বঁাচতে না । দুপুর রোদঘুরে দু-হাত তুলে সবার নৃত্য। রবিকাকা ছিলেন না সেখানে, তিনি বোধ হয় সে সময়ে অন্য কোথাও ছিলেন । যাক, আস্তে আস্তে প্যারাসুট তো নামল। আমরা দৌড়ে গিয়ে রামবাবুকে ধরে নামিয়ে হাওয়া করে শরবত-টরবত খাইয়ে সুস্থির করি। পরে জিজ্ঞেস করলুম, আচ্ছা, বেলুন থেকে লাফিয়ে পড়তে এত দেরি করলেন, বুঝতে পারেন নি বুঝি ? তিনি বললেন, আরে না না, ও-সব না। বুঝতে ঠিকই পেরেছিলুম, কিন্তু যত বারই লাফিয়ে পড়বার জন্য দড়ি ধরতে যাই মনের ভিতর কেমন যেন করে ওঠে, হাত সরিয়ে নিই। তার পরে যখন দেখলুম বেলুন উঠতে উঠতে এত উপরে উঠে গেছে যে আর কিছুই প্রায় দেখা যায় না তখন সাহসে ভর করে ‘জয় মা’ বলে লাফিয়ে পড়লুম। যাক, দেশী লোকের খোলা বেলুনে ওড়াও হল, পারাসুট দিয়ে নামাও হল । এবারে-রামবাবু বললেন, বাঘের সঙ্গে লড়াই করতে হবে । নবগোপালবাবু, যা পারেন নি সেইটে তিনি করলেন। রামবাবু বললেন, ও-সব নয়, আমি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে লড়াই করব । কোথেকে একটা কেঁদো বাঘ জোগাড় করে একদিন খেলা দেখালেন পাথুরেঘাটার রাজবাড়িতে। রামবাবু বললেন, সাহেব বেটার আর কী খেলা দেখায় বাঘের, দু পাশে দুটো বন্দুক নিয়ে লোহার খাচার ভিতরে । আমি দেখাব খেলা খোলা উঠানে । ছোটো একটা খাচায় বাঘটাকে আনা হল । রামবাৰু বাঘের খেলা দেখালেন ; ঘুষোঘাষা চড়চাপড় মেরে কেমন করে বেশ বাগে আনলেন বাঘটাকে। খেলা দেখিয়ে আবার খাচায় পুরে দিলেন । অসীম সাহসী ছিলেন তিনি। ওই বাঘের খেলাই তার শেষ কীর্তি । কিছুদিন বাদে শুনি তিনি সন্ন্যাসী হয়ে চলে গেছেন হিমালয়ে। এখনো নাকি তিনি জীবিত আছেন, চন্দ্রস্বামী না কী নাম নিয়ে হিমালয় পাহাড়ে তপস্তা করছেন । S&S
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৩৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।