পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আছে । থিয়েটারে লোকজন আসবে, বাড়ির অন্যান্ত সব ছেলেদের এক-- একজনের উপর এক-একটা ভার তাদের রিসেপশন করবার। নবীনবাবু নির্মলের দাদামশায়, তার উপরে ভার ছিল ঘণ্টা বাজাবার । একদিন হয়েছে কী, থিয়েটার হচ্ছে, নবীনবাবু সময়মত ঘণ্ট। বাজিয়ে যাচ্ছেন। ইণ্টারভাল হল, দশ মিনিট বিশ্রাম। ও ঘরে থিয়েটার, পাশের ঘরে সাপারের ব্যবস্থা । ইণ্টারভালে সবাই এসেছেন এ-ঘরে খেতে, ও-ঘরে নবীনবাবু ঘড়ি হাতে নিয়ে ঘণ্টা পরে সোজা দাড়িয়ে । দশ মিনিট হয়েছে কি ঢ’ ঢং করে দিলেন ঘণ্ট পিটিয়ে, সাহেব স্থবোরা ও অন্য অভ্যাগতর কেউ হয়তো খেতে শুরু করেছেন কি করেন নি, সবাই দে ছুট। জ্যাঠামশায় বলেন, ব্যস্ত হবেন না আপনার নিশ্চিন্ত মনে খান, আপনাদের খাওয়া শেষ হলে আবার থিয়েটার শুরু হবে । জ্যাঠামশায় নীচে গিয়ে নবীনবাবুকে বলেন। নবীনবাবু অমনি বুকপকেট থেকে ঘড়ি বের করে বললেন, দেখো বাবা, দশ মিনিটের কথা, দশ মিনিট। হয়ে গেছে কিনা - - আমি পাঙ চুয়ালি ঘণ্ট দিয়েছি। শেষে জ্যাঠামশায় অনেক বুঝিয়ে তাকে ঠাণ্ড করলেন। অক্ষয় মজমদার প্রায়ই আসতেন ইদানীং দীপুদার কাছে। তার কাছে গল্প শুনেছি। তিনি বলতেন, জানো ভাই, থিয়েটার তো হচ্ছে, শহরে হৈ-হৈ ব্যাপার। রাস্ত দিয়ে আসছি একদিন, এক বৃদ্ধ আমাকে ধরে পড়লেন , বললেন, যে করে হোক আমাকে একখানা টিকিট দিন। আমি বৃদ্ধ হয়েছি, থিয়েটারের এত নাম শুনছি, হারমোনিয়াম বাজনা হবে, আমাকে একখানা টিকিট জোগাড় করে দিতেই হবে। কী আর করি, তাকে তো একখানা টিকিট দিলুম কোনোমতে জোগাড় করে । তিনি এসে থিয়েটার দেখে গেলেন, আর কোনো সাড়াশব্দ নেই । তার পরদিন রাস্ত দিয়ে থেলে হুকো টানতে টানতে আসছি, পথে সেই বৃদ্ধের সঙ্গে দেখা ; তিনি নিমতলার ঘাটে সকাল বেলা গঙ্গাস্নান করে ফিরছেন । আমি বললুম, কেমন দেখলেন থিয়েটার। বৃদ্ধ একেবারে চেচিয়ে উঠলেন ; বললেন, যা যা, তোর মুখদর্শন করতে নেই। যা যা, পাপিষ্ঠ কোথাকার, সকালবেল গঙ্গাস্নান করে তোর মুখদর্শন করতে হল ; সরে যা, সরে যা, কথা কবি নে। এই বলে যা-তা ভাষায় আমাকে গালাগালি দিতে লাগলেন। আমি তো ভেবে পাই নে কী হল। বৃদ্ধ. ১২৫