শেষ হয়ে গেল। কালী সিংহের ‘হুতুম পেচার নকশী, টেকচাদের ‘আলালের ঘরের দুলাল” পুরোনো সমাজকে চতুর্দিক থেকে আঘাত করছে। বঙ্কিম তখন সাহিত্যজগতে উদীয়মান লেখক। তখন ন্যাশনাল অীর বেঙ্গল দুটো পাবলিক স্টেজ হয়ে গেছে । এলেন নাট্যজগতে জ্যোতিকাকামশায় । ‘অশ্রুমতী’ নাটক লিখেছেন, থিয়েটার হবে পাবলিক স্টেজে বাইরের লোক দিয়েই । আমার বয়স তখন পাচ কি ছয়, চাকর কোলে করে নিয়ে বেড়ায় । তপনকার দু-এক বছর কত তফাত, বাড়তির সময় কিনা বয়সের । থিয়েটারে শরৎবাব সত্যিকার ঘোড়ায় চেপে স্টেজে উঠলেন । সে এক আশ্চর্য ব্যাপার তখন, একটা হুল্লোড় পড়ে গেছে চারি দিকে । নানা রকম গল্পই কানে আসে, চোখে তার দেখতে পাই নে। পড়বারও তখন ক্ষমতা হয় নি যে বইটা পড়ে গল্প শুনল নান বকম এটা ওটা কানে আসছে, আর আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে মার কাছে গল্প শুনি, এই রকম সব ব্যাপার হচ্ছে। অশ্রুমতী অভিনয় হল, বাড়ির মেয়ের কেউ দেখতে পেলেন না। তখন পাবলিক স্টেজে গিয়ে মেয়েরা দেখবে, এ দস্তুর ছিল না। কী করা যায়। বাবামশায় বললেন, পুরো বেঙ্গল থিয়েটার এক রাতের জন্য ভাড়া নেওয়া হোক। কেবল আমাদের বাড়ির লোকজন থাকবে সেদিন । অ্যাক্টাররা ছাড়া বাইরের লোক আর-কেউ থাকবে না । সেই প্রথম মেয়ের ছাঁড়া পেলে পাবলিক স্টেজে থিয়েটার দেখতে । ছয় বছরের শিশু আমার মতে, আর অনেক বুড়িদেরও সেই প্রথম থিয়েটার দেখা । অনেক টাকা খরচ করে এক দিনের জন্য স্টেজ ভাড়া করা হল , বেঞ্চিটেঞ্চি নয়, ও-সব সরিয়ে বাড়ির বৈঠকখানা থেকে আসবাবপত্র নিয়ে হল সাজানো হল । নীচে কাপেট পেতে ইজি-চেয়ার, ফুলের মালা, আলবোলা , মেয়েদের জন্য চিকের ব্যবস্থা - ঠিক যেন আটচালা সাজানো হয়েছে। স্টেজের অডিটরিয়াম ঘর হয়ে গেল । ছোটোদিদিমা ত্রিপুরাসুন্দরী আছেন, বাড়ির ছেলেমেয়ে কেউ বাদ যাবে না, সবাই যাবে – আমরাও অনুমতি পেলুম থিয়েটার দেখবার । ঘর হয়ে গেছে, ঘরে বসে দেখব, আপত্তির কী আছে । সবাই গেছি, রামলাল চাকর আমাকে স্টেজের বা দিকে প্রথম রো’তে— 'রো' বলে কিছু ছিল না, আমাদেরই চেয়ার দিয়ে সাজানো হয়েছিল ঘর – তবু রামলাল আমাকে স্টেজের সামনেই বসিয়ে দিলে, ছোটো ছেলে ভালো করে Տ Ջ Գ
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৪০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।