প্রহসনই হত বাড়িতে বড়োদের নিয়ে। ছোটোরা তার ধারে কাছে ঘেঁষতে পারত না। এ-বাড়ির খড়খড়ি টেনে দীপুঙ্গার নীচের বৈঠকখান বেশ দেখা যায়। আমরা সেই খড়খড়ি টেনে মাঝে মাঝে দেখতুম, ম-পিসিমারাও রাতবিরেতে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতেন। রাত্রির অন্ধকারে কে আর আমাদের দেখতে পাচ্ছে । বঙ্কিমবাবুও আসতেন সে সময়ে। একদিন দেখি বঙ্কিমবাবু মাথায় পাকানো চাদরের পাগড়ি বেঁধে লাঠি ঘুরিয়ে কী যেন করছেন। আর র্তার চেহারাও ছিল অতি স্বন্দর। ওই তার এক রূপ আমার মনে আছে। ও-সব ছিল নিছক বৈঠকখানার ব্যাপার। তার পর ওঁরা বাল্মাকিপ্রতিভা অভিনয় করলেন, তখন বাড়ির মেয়েদের ডাক পড়ল। ঋতুকে ছেলে সাজানো হল। প্রতিভাদিদি সরস্বতী সাজলেন, রবিকাক সাজলেন বাল্মীকি ঋষি। সারদাপিসেমশায়, কেদারদাদা, অক্ষয়বাবু, এর সব সেজেছিলেন বড়ো বড়ো ডাকাত থেকে থেকে বাল্মীকিপ্রতিভা অভিনয় হয়, আমরা আর দেখতে পাই নে – ওই যে বললুম, ছোটোদের বড়োদের কাছে ঘোষবার হুকুম ছিল না । একদিন বাবামশায় পার্টি দেবেন, খাওয়া দাওয়া হবে, লোকজনদের নেমস্তন্ন করা হয়েছে, তাতে বাল্মীকিপ্রতিভাও অভিনয় হবে। মহা ধুমধাম । তেতলার ছাদ-চার দিকে রেলিং আর পিলপে দেওয়া, ঘেরা, তারই উপরে চালা বেঁধে স্টেজ তৈরি হল । তখন তো ইলেকট্রিক বাতি ছিল না, গ্যাসের বাতির ব্যবস্থা হয়েছে। সমাজ থেকে হারমোনিয়াম আনা হল । আমরা সকাল থেকে সারদাপিসেমশায়কে ধরেছি একবার আমাদের জন্য দরবার করতে, অভিনয় দেখব। সারা দিন তার পিছু পিছু ঘুরছি, ও-বাড়ির বারান্দায় পিসেমশায়কে দেখলেই এ-বাড়ি থেকে দু হাত কচলে আমাদের আবেদন জানাই । তিনি বলেন, হবে হবে। এই করতে করতে অনেক কষ্টে প্রায় বিকেলবেলা পেয়ে গেলুম অমুমতি। সারদাপিসেমশায় বললেন, হয়েছে, তোমাদের দরখাস্ত মঞ্জুর হয়েছে, আজ-দেখতে পাবে তোমরা । আমাদের উৎসাহ দেখে কে। সরলা তখন ছোটো, সে আমাদের দলেই। আমরা বিকেল থেকে জাম-কাপড় পরে তৈরি হয়ে আছি, বিকেলের জলখাবার কোনো রকমে একটু মুখে দিলুম। তখন কি আমাদের ধিলেভেক্টর ురి' -- - - - -**
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।