তখন আরো মোট লম্বা-চওড়া ছিলুম অথচ ছোকরার মতো চটপটে, মুখেচোখে কথা ; রবিকাকা বললেন, অবন, তুমি এত বদলে গেলে কী করে। একটা বোতাম-খোলা বড়ো ছিটের জামা গায়ে, পানের পিচকি বুকময়। মা বলতেন, তুই এমন একটা হতভাগা-বেশ কোখেকে পেলি বল তো ! এক হাতে সদেশের ঝুড়ি, আর-এক হাতে খেতে খেতে স্টেজে ঢুকছি, রবিকাকার সঙ্গে সমানে সমানে কথা কইছি, প্রায় ইয়াকি দিচ্ছি খুড়োভাইপোতে। প্রখম প্রথম বড়ে সংকোচ হত, হাজার হোক রবিকাকার সঙ্গে ও-রকম ভাবে কথা বল, কিন্তু কী করব— অভিনয় করতে হচ্ছে যে । কথা তো সব মুখস্থ ছিলই, তার উপর আরো বানিয়ে টানিয়ে বলে যেতে লাগলুম। রবিকাকা আর থৈ পান না। আমাদের সেই অভিনয় দেখে গিরিশ ঘোষ বলেছিলেন, এ-রকম অ্যাক্টার সব যদি আমার হাতে পেতুম তবে আগুন ছিটিয়ে দিতে পারতুম। একদিন রবিকাকা পার্ট ভুলে গেছেন, স্টেজে ঢুকেই এক সিন বাদ দিয়ে ‘কী হে তিনকড়ি বলে কথা শুরু করে দিলেন। আমি চুপিচুপি বলি বাদ দিলে যে রবিকাকা, প্রথম সিনটা । তা, তিনি কেমন করে বেশ সামলে গেলেন । জ্যোতিকাকা করেছিলেন আরো মজার— পার্ক স্ট্রীটে কী একটা প্লে হচ্ছে, স্টেজে ঢুকেছেন, ঢুকে নিজের পার্ট ভুলে গেছেন। তিনি সোজা উইংসের পাশে গিয়ে সকলের সামনেই জিজ্ঞেস করলেন, কী হে, বলে দাও-না আমার পার্টট কী ছিল, ভুলে গেছি যে । এই তো গেল নানা ইতিবৃত্ত । কিছুকাল বাদে খামখেয়ালীও উঠে যায়। কেন যে উঠে যায় তার একটা গল্পও আছে। বলব তোমাকে সব ? কী জানি শেষে না আবার বন্ধুমানুষ কেউ কেউ ক্ষুন্ন হন। যাক গে, নাম বলব না কারুরই, গল্প শুনে রাখে। আমার আর কয়দিন, যা-কিছু আমার কাছে আছে সব তোমার কাছে জমা দিয়ে যাই। অনেক কথাই কেউ জানে না, আমি চলে গেলে আর জানবার উপায়ও থাকবে না। দরকার মনে করে যদি জানিয়ে তাদের, আমি তোমার কাছে বলেই খালাস ; এর পর তোমার যা ইচ্ছে কোরে । কী বলছিলুম যেন, খামখেয়ালী উঠে যাবায় কথা, কেন উঠে গেল । বলি শোনো । Y0ò *
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৫৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।