নিজে থেকে তাদের খুঁজতে যাচ্ছি নে— নিজের ইচ্ছামতো তারাই এসে চোখে পড়ছে আমার, যথাভিরুচি রূপ দেখিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে খেলুড়ির মতো খেলা শেষে। সেই পঞ্চাশ বছর আগে তখনো তেমনি বোধ হত। দেখছি না আমি, কিন্তু দেখা দিচ্ছে আমাকে সবাই ; আর এই করেই জেনে চলেছি তাদের নিভুল ভাবে । রোদ, বাতাস, ঘর, বাড়ি, ফুল, পাতা, পাখি এর সবই তখন কি ভুল বোঝাতেই চলল অথবা স্বরূপটা লুকিয়ে মন-ভোলানো বেশে এসে সত্যি পরিচয় ধরে দিয়ে গেল, আমাকে তা কে ঠিক করে বলে দেয় ? এ-বাড়িটা তখন আমায় জানিয়েছে— মাত্র তেতলা সে । তেতলার নীচে যে আর-একটা তলা আছে, দোতলা বলে যাকে, এবং তারও নীচে একতলা বলে আর-একটা তলাও আছে– এ-কথা জানতেই দেয় নি বাড়িটা । কিন্তু সে জলে না হাওয়ায় ভাসছে এ মিছে কথাটাও তো বলে নি বাড়িটা । অসত্য রূপটাও তো দেখা যায় নি। আপনার খানিকট রেখেছিল বাড়ি আড়ালে, খানিকট দেখতে দিয়েছিল, তাও এমন একটি চমৎকার দেখা এবং না-দেখার মধ্য দিয়ে যে তেমন করে সারা বাড়ির ছবি ধরে, কিম্বা ইঞ্জিনিয়ারের প্ল্যান ধরে, অথবা আজকের দিনে সারা বাড়িখানা ঘুরে ঘুরেও দেখা সম্ভব হয় না। আজকের দেখা এই বাড়ি সে একটা স্বতন্ত্র বাড়ি বলে ঠেকে, ষেট। সত্যিই আমাকে দেখা দেয় নি। কিন্তু সেদিনের সে একতলা দোতলা নেই এমন যে তিনতলা, সে এখনো তেমনিই রয়েছে আমার কাছে। নিজে থেকে জানা শোনা:দেখা ও পরিচয় করে নেওয়া আমার ধাতে সয় না । কেউ এসে দেখা দিলে, জানান দিলে তো হল ভাব ; কেউ কিছু দিয়ে গেল তো পেয়ে গেলাম। পড়ে পাওয়ার আদর বেশি আমার কাছে ; কুড়িয়ে পাওয়ার ছড়ির মূল্য আছে আমার কাছে , কিন্তু খেটে পাওয়া পাঠার মুড়ির দিকে টান নেই আমার । হঠাৎ খাটুনি জুটে গেলে মজা পাই, কিন্তু হঠাৎ সত্যি হঠাৎ হওয়া চাই, না-হলে নকল 'হঠাৎ কোনোদিনই মজা দেয় না, দেয়ওনি আমাকে। আমি যদি সাহেব হতেম তে। অবিবাহিতই থাকতে হত, কোর্টশিপটা আমার দ্বারা হতই না। দাসীটা চলে গেল তার যেটুকু ধরে দেবার ছিল দিয়ে হঠাৎ । এমনি হঠাৎ একদিন উত্তর-পূব কোণের ঘরটাও যা-কিছু দেখবার ছিল দেখিয়ে যেন সরে গেল আমার কাছ থেকে। Ye
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।