পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S তোমাদের এখানে আজ বর্ষামঙ্গল হবে ? আমাদেরও ছেলেবেল বর্ষামঙ্গল হত। আমরা কী করতুম জানো ? আমরা বর্ষাকালে রথের সময়ে তালপাতার ভেঁপু কিনে বাজাতুম ; আর টিনের রথে মাটির জগন্নাথ চাপিয়ে টানতুম, রথের চাকা শব্দ দিত ঝন ঝন, যেন সেতার নূপুর সব একসঙ্গে বাজছে। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ত দেখতে পেতুম, থেকে থেকে মেঘলা আলোকে রোদ পরাতে চাপাই শাড়ি — কী বাহার খুলত ! তবে শোনো বলি একটা বাদলার কথা। সন্ধে হতে ঝড়জল আরম্ভ হল, সে কী জল, কী ঝড় ! হাওয়ার ঠেলায় জোড়াসাকোর তেতালা বাড়ি যেন কঁপিছে, পাকা ছাত ফুটো হয়ে জল পড়ছে সব শোবার ঘরে । পিদিম জালায় দাসীরা, নিবে নিবে যায় বাতাসের জোরে । বিছানাপত্তর গুটিয়ে নিয়ে দাসীরা আমাদের কোলে করে দোতলায় নাচঘরে এনে শোয়ালে । বাবা মা, পিসি পিসে, চাকর দাসী, ছেলেপূলে, সব এক ঘরে। এক কোণে আমাকে নিয়ে আমার পদ্ম দাসী কটর কটর কলাইভাজ চিবোচ্ছে, আমাকে দু-একটা দিচ্ছে আর ঘুম পাড়াচ্ছে, চুপি চুপি ছড়া কাটছে – ঘুমতা ঘুমায় ; গাল চাপড়াচ্ছে আমার, পা নাচাচ্ছে নিজের ছড়া কাটার তালে তালে । ও দিকে শে শে। শব্দ করছে বাইরের বাতাস ; এক-একবার নড়েচড়ে উঠছে বড়ো ঘরের বড়ো বড়ো কাঠের দরজাগুলো। খানিক ঘুমিয়ে খানিক জেগে কাটল ঝড়ের রাত । সকালে কাক পাখি ডাকে না, আকাশ ফরসা হয় নী মাছের বাজারে মাছ আসে নি, পান-বারুই পান আনে নি। শশী পরামানিক এসে খবর দেয়, শহরের রাস্তায় হয়েছে এক-কোমর জল । ও দিব্য ঠাকুর, আজ কী রায় ? — ‘ভাতে ভাত খিচুড়ি বলে খুন্তি হাতে চলে যায় রান্নাবাড়ির দিকে। কেরাঞ্চি গাড়ি চলল না আপিসের দিকে, গোরুর গাড়িতে ব্যাঙের ছাতার নীচে বসে ব্যাঙ্কের বড়োবাবুর সরকার কাজে যাচ্ছেন। সিজিদের পুকুর ভেসে মাছ পালিয়েছে, পাড়ার লোক ধরে ধরে ভেজে খাচ্ছে। হিরু মেথর এসে খবর দিতেই বেরিয়ে পড়ল বিপনে চাকর ছোটো ডিঙি বেয়ে শহরের আলিগলিতে ফিরতে । কাগজের নৌকো চলল আমাদের እማው