কান্নাকাটি— যাব না, কিছুতেই যাব না । চাকররা জোর করে গাড়িতে তুলবেই তুলবে। মনে হয় গাড়ির চাক দুটাে বুকের উপর দিয়ে চলে যাক সেও ভালো, তবু স্কুলে যাব না। মহা ধ্বস্তাধস্তি, অতটুকু ছেলে পারব কেন তাদের সঙ্গে ? আমার কান্নায় ছোটোপিসিমার এক-একদিন দয়া হয়, বলেন, ও গুহ, নাই-বা গেল অব আজ স্কুলে। রামলালকে বলেন, ‘রামলাল, আজি আর ও স্কুলে যাবে না, ছেড়ে দে ওকে ’ কোনো কোনো দিন তার কথায় ছাড়া পাই। কিন্তু বেশির ভাগ দিনই চাকররা আমায় দু হাতে ধুরে ঠেলে গাড়ির ভিতরে তুলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় । গাড়ি চলতে শুরু করে, কী আর করি, জোরে না পেরে বন্দী অবস্থায় দু চোখের জল মুছে গুম হয়ে বসে থাকি। স্কুল ভালো লাগে না মোটেই। ভালো লাগে শুধু স্কুলে একটি ঘরে কাচের আলমারিতে তোলা একখানি খেলনার জাহাজ আর গোটাকয়েক নানা আকারের শঙ্খ । বেশির ভাগ সময় কাচের আলমারির সামনে বসে বসে সেগুলো দেখি । জানো ? আমার ছবি আঁকার হাতেখড়ি হয় সেইখানেই, ওই নর্মাল স্থলেই। আর কোনো বিদ্যের হাতেখড়ি তো হল না, তবু ভাগ্যিস ওই হাতেখড়িটুকু হয়েছিল। তাই-না তোমাদের এখনো একটু ছবি-টবি একে দিয়ে খুশি রাখতে পারি। নয় তো আর কারো কোনো কাজেই লাগভূম না আমি । এখন শোঙ্গে তবে সেই হাতেখড়ির গল্প । একটি মেটে কুজে, একটি মেটে গ্লাস, ছবির হাতেখড়ি আমার এই দুটি দিয়ে। বললুম তো, আমি তখন নর্মাল স্কুলে, পড়াশুনা করি বলব না, যাওয়াআসা করি। পাশেই বড়ে ছেলেদের ক্লাস, সেই ক্লাসের জানলার ধারে গিয়ে সময়-সময় বসে থাকি। বোতল বোতল লাল নীল জল নিয়ে মাস্টারমশায় ঢালাটালি করেন ; লাল হয় নীল, নীল হয় লাল, মাঝে মাঝে লাল নীল দুইই উবে যায়, বোতলে পড়ে থাকে ফিকে রঙের জল খানিকটে, চেয়ে চেয়ে দেখি, ভারি মজা লাগে । কেমিয়াবিদ্যা শেখানো হয়ে গেলে আসেন সাতকড়িবাবু ড্রইং মাস্টার। একটা মোট কাগজে বড়ো বড়ো করে আঁকা একটি মেটে কুঁজে ও মাস, সেইটে কালে বোর্ডের গায়ে ঝুলিয়ে দিয়ে ছেলেদের বলেন, ‘দেখে দেখে আঁকো এবারে। ছেলেরা তাই আঁকে খাতার পাতায়। মাস্টার ঘুরে ঘুরে সবার কাছে গিয়ে দেখেন। এখন, সেই ক্লাসে আছে আমাদের পাশের গলির ভুলু একসঙ্গেই স্থলে যাওয়া-আসা করি। তাকে ধরে পড়লুম, কী করে কুঁজে৷ »ግግ उव >*>३
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/১৯৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।