মনে আছে এক অবস্থায় শীত গ্রীষ্ম বর্ষ কিছুই নেই আমার কাছে। সেই সময়টাতে ছোটো ঘরে হঠাৎ একদিন সকালে জেগেই দেখলেম— লেপের মধ্যে থাকতে থাকতে, কোন এক সময় শীতকাল গিয়ে গরম কাল এল । আজ সকালে আমার কপালটায় ঘাম দিয়েছে, আজই দাদীরা বিছানার তলায় লেপটিকে তাড়িয়ে দেবে, আজ রাতে খোলা জানলায় দেখা যাবে নীল আকাশ আর থেকে থেকে তারা, আর আমাকে একট। শাদ জামার উপরে আর-একটা স্বতোর কাপড়ের ঠিক তেমনি জামা পরে নিতে হবে না, সঙ্কাল থেকে মোজা পায়ে দিয়েও কর্মভোগে ভুগতে হবে না জেনে ফেললাম হঠাৎ ৷ সেই ছেলেবেলা থেকে আজ পর্যন্ত না-জানা থেকে জানার সীমাতে পৌঁছনোব বেলা একটা কোনো নির্দিষ্ট ধারা ধরে অঙ্কের যোগ বিয়োগ ভাগফলটার মতো এসে গেল জগৎ-সংসারের যা-কিছু, তা হল না তো আমার বেলায় । কিম্ব ঘটা করে আগে থাকতে জানfন দিয়ে ঘটল ঘটনা সমস্ত তাও নয় । -হঠাৎ এসে বললে তারা বিস্ময়ের পর বিস্ময় জাগিয়ে – “আমি এসে গেছি!! ঠিক যেমন ছবি এসে বলে আজও হঠাৎ— ‘আমি এসে গেলেম, একে নাও চটপট । যেমন লেখা বলে— ‘হয়ে গেছি তৈরি, চালিয়ে চলে কলম ।’ চমকি দেবী বলে নিশ্চয় জানি কেউ আছেন আর কাজই র্যার গোড়া থেকেই চমক ভাঙিয়ে দেওয়া । দেখার পুজি জানার সম্বল তিল তিল খুঁটে ভরে তুলতে কত দেরি লাগত যদি চমকি না থাকতেন সঙ্গে দাসীটা ছেড়ে যাবার পরেও । কিণ্ডারগার্টেন স্কুলের ছাত্রের মতে সেপ বাই স্টেপ পড়তে পড়তে চলতে দিলেন না দেবী আমাকে, হঠাৎ পড়া হঠাৎ না-পড়া দিয়ে শুরু করলেন শিক্ষা তিনি । বাড়ির আলিগলি আপন-পর সব চেনা হয়ে গেছে, বাড়ির বাইরেটাকেও জেনে নিয়েছি। কাকের বুলি কোকিলের ডাক ভিন্নতা জানিয়ে দিয়েছে আপনাদের। গোরু-গাধাতে, মামুষে-বানরে, ঘোড়াতে আর ঘোড়ার গাড়িতে মিল অমিল কোনখানে বুঝে নিয়েছি। বাড়ির চাকর-চাকরানী তাদের কার কী কাজ ; কার মনিব কে-বা– সবই জানা হয়ে গেছে। বুঝেও নিয়েছি আমি এ-বাড়ির একজন। কিন্তু কী নাম আমার সেটা বলার বেলায় ই করে থাকি বোকার মতো— অথচ থামকে বলি থামই, ছাতকে ছাতা বলে ভুল করি নে ; পুকুরকে জানি পুকুর, আর তার জলে পড়লে হাবুডুবু খেয়ে মরতে X Y.
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।