চেরি আসে চিনি-মাখানে । বাবামশায় একটি একটি করে ওই চেরি খাওয়ান তাদের। দেখে হিংসেয় জলে মরি। ভাবি ওই চেরিগুলো নিজের যদি খেতে পাই, আঃ । তার শখের হরিণও আছে একটি, নাম গোলাপি। গোলাপির কাছে গেলে মালী আসে হৈ-হৈ করে । দেখে এমন আমার কপাল ! পশুপাখির কাছেও পাত্ত পাই নে। ওই একটু যা আদর পাই ছোটো পিসিমার কাছে । মাঝে মাঝে তার ঘরে আমায় ডেকে নেন । সেখানে কথকতা হয় রোজ। মাইনে-করা মহিম কথক আছেন। বসে শুনি খানিক। কিন্তু তাও আর কতক্ষণই-ব । মহা মুশকিল, একলা একলা সময় আর কাটে না । মনের দুঃখে ভাবি এর চেয়ে বেশ ছিলুম স্কুলেই। গাড়িতে ওঠবার আগেই যত কান্নাকাটি, উঠেই সব ঠাণ্ড হয়ে যেত। গাড়ি চলত গলির মোড় ঘুরে । সেই শিবমন্দির, কাসরঘণ্টা, লোকজন, দোকানপাট রাস্তার দু দিকে দেখতে দেখতে বেশ যেতম। তবুও তো বাইরের জগৎ দেখতে পেতুম কিছুটা ; এখন কোন বন্ধখানায় পড়লুম! ফটক পেরিয়ে ও দিকে যাবারই আর উপায় নেই । খোলা ফটক আগলে বসে আছে মনোহর সিং দরোয়ান দেউড়িতে। মনে পড়ে স্কুলের সামনে প্রতাপের লজেঞ্জুসের দোকান। চেয়ে নিয়ে ছোট ছোট্ট হলদে লাল সবুজ লজেঞ্জুস খেতুম। চাইলেই দুটি-একটি হাতে গুজে দিত প্রতাপ । - আর মনে পড়ে সমবয়সীদের কথা । তাদের নিয়ে "হুটোপাট করেও মন্দ ছিলুম না। আমারই মতো ডানপিটে ছেলেও ছিল একটি-দুটি । একটির কথা বলি; স্কুলে যেতে তারও ছিল বেজায় আপত্তি । যাবার সময় হলেই সে পালিয়ে বেড়ায় । একদিন স্কুলে যাবার সময় হয়েছে ; সে এ দিকে করেছে কী বাড়ির পাশেই এক শিবমন্দির, তার ভিতরে ঢুকে কাপড়জামা খুলে অন্ধকার ঘরে কালে পাথরের শিবকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল। ছেলেটির রঙও কালে, শিবের কালোয় তার কালোয় মিশে গেল । চাকরবাকররা আর খুঁজে তাকে পায় না । মহা হৈ-চৈ । শেষে কে একজন শিবের মাথায় জল ঢালতে গিয়ে তাকে আবিষ্কার করলে। সেই-সব সঙ্গীর কথা মনে পড়ে, আর মন খারাপ হয়ে যায়। নর্মাল স্কুলের বাড়িটিও ছিল কেমন রহস্যময়। প্রকাও রাজবাড়ি ; তাতে কত অলিগলি, অন্দিসন্দি, এখানে ঘর, ওখানে খিলেন-দেওয়া বারান্দা, মোট Sb-8
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২০১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।