মোট থাম ; তারই গায়ে দিনের আলো পড়ে চক্চক করত। ঘুরে ঘুরে দেখতুম এই-সব। কোথায় গেল আমার সেই নর্মাল স্কুল। বহুকাল পর এই সেদিন কোন এক সিনেমাতে দেখলুম সেই বাড়ির ছবি। দেখে ভারি মজ লাগল। যাক সে কথা । এখন আমার একলা থাকার গল্পটাই বলি । সকালবেলাটা লেখাপড়ায় যদিও কোনোমতে কেটে যায়, দুপুর অরি কাটে না । দাদার, চলে যান স্কুলে, বাবামশায় যান কাছারিতে। ফার্সি পড়াবার মুনশি আসেন ; দু-চারটে আ লে বে পড়িয়ে চলে যান। এই মুনশিই দাড়িয়ে দেয়ালে নিজের ছায়ার সঙ্গে লড়াই করতেন। একদিন লড়াই করতে গিয়ে রোধের মাথায় ছায়াতে যেমন টু মারা অমনি মুনশির কপাল ফেটে রক্তপাত ! চাকররাও তাদের তোষাখানায় গল্পগুজব করে। বৈঠকখানা শোনশান, একলা আমি সেখানে পড়ে থাকি। থেকে থেকে দাদাদের ডেকৃসোর ঢাকা তুলে দেখি ভিতরে কী আছে। নেড়েচেড়ে দেখে আবার তেমনি সব ঠিকঠাক রেখে দিই। প্রাণে ভয়, যদি জানতে পারেন হয়তো বকুনি দেবেন। বাবামশায়ের টেবিলট দেখি। কতরকম রঙ তার উপরে সাজানে। একটা ক্রিস্টালের কলমদানি ছিল, ঠিক যেন সমুদ্রের ঝিনুক একটি। সেইরকম নকশায় গোলবাগানে ফোয়ার তৈরি করিয়েছিলেন বাবামশায় ৷ এখনো তা আছে ; সেদিন যখন গেলুম জোড়াসাকোয়, দেখি বাগানের সব-কিছু ভেঙে কেটে নষ্ট করে ফেলেছে, একটি গাছও বাকি রাখে নি; কিন্তু ফোয়ারাটি তেমনি আছে সেখানে, ফটিক জলে ভতি । বাবামশায়ের টেবিলে সেই কমলদানিতে কলম সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেটাতে একবার হাত বুলোই, আবার এসে শুয়ে থাকি। তাও কোথায় শুয়ে থাকতুম জানো ? বিলিয়ার্ড টেবিলের নীচে। মাকড়সার জাল, ধুলো বালি কত কী সেখানে। শুয়ে শুয়ে দেখি মাথার উপরে ঝুলছে সে-সব । শোবার জায়গা আমার ওই রকমেরই। ছেড়া মাদুরের উপরে, কোঁচ-টেবিলের তলায় তলায়, ঢুকে শুয়ে থাকি। ঠিক যেন একটা জানোয়ার। বুদ্ধিও কতকটা আমার তেমনি তবে একলা থাকার গুণ আছে একটা । দেখতে শুনতে শেখা যায় । ওই অমনি করে একলা থাকতে থাকতেই চোখ আমার দেখতে শিখল, কান শব ধরতে লাগল। তখন থেকেই কত কী বস্তু, কত কী শব্দ যেন মন-হরিণের কাছে এসে পৌছতে লেগেছে। মানুষ পশুপাখি সঙ্গী পেলেম ন কাউকেই। ওই অত বড়ো বাড়িটাই তখন আমার সঙ্গী হয়ে উঠল ; নতুন রূপ নিয়ে আমার Slz-67.
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২০২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।