পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর-একটা জায়গা, সেটি আমার পরীস্থান। দেখে, যেন শুনে হেসে না । আমার পরীস্থান আকাশের পারে ছিল না । ছিল একতলায় সিড়ির নীচে একটা এদো ঘরের মধ্যে। সেই ঘর সারা দিনরাত বন্ধ থাকে, দুয়োরে মস্ত তাল । ওৎ পেতে বসে থাকি সকাল থেকে, বড়ো সিড়ির তলায় দোরগোড়ায় । নন্দ ফরাস আমাদের তেলবাতি করে, তার হাতে সেই তালাবন্ধ ঘরের চাবি । সে এসে সকালে তালা খোলে তবে আমি ঢুকতে পাই সেই পরীস্থানে। সেখানে কী দেখি, কাদের দেখি ? দেখি কর্তাদের আমলের পুরোনো আসবাবপত্রে ঠাস সে ঘর। কালে কালে ফ্যাশান বদল হচ্ছে, নতুন জিনিস ঢুকছে বাড়িতে, পুরোনোর স্থান পাচ্ছে আমার সেই পরীস্থানে। কত কালের কত রকমের পুরোনো ঝাড়-লণ্ঠন, রঙবেরঙের চিনেমাটির বাতিদান, ফুলদানি, কাচের ফাঙ্কস, আরো কত কী। তারা যেন পুরাকালের পরী— তাকের উপর সারি সারি চুপচাপ, ধুলো গায়ে, ঝুল মাকড়শার জাল মুড়ি দিয়ে বসে আছে ; কেউ-ব মাথার উপরে কড়ি থেকে ঝুলছে শিকল ধরে। ঘরের মধ্যেটা আবছা অন্ধকার । কাচমোড় ঘুলঘুলি থেকে বাইরের একটু হলদে আলো এসে পড়েছে ঘরে। সেই আলোয় তাদের গায়ে থেকে থেকে চমক দিচ্ছে রামধন্থর সাত রঙ । আঙল দিয়ে একটু ছুলেই টুংটাং শব্দে ঘর ভরে যায়। মনে হয়, যেন সাতরঙ সাত পরীর পায়ে ঘুঙুর বাজছে। সেই রঙবেরঙের পরীর রাজত্বে ঢুকে এটা ছুই ওট ছুই, একে দেখি তাকে দেখি, কাউকে-ব হাতে তুলে ধরি, এমন সময়ে নন্দ ফরাস তার তেলবাতি সেরে হাক দেয়, ‘বেরিয়ে এসে এবারে, আর নয়, কাল হবে।’ তালাচাবি পড়ে যায় সে দিন-রাতটার মতো আমার পরীরাজত্বের ফটকে ; সেই যেবার মুকুলের স্কুলে রবিকার ছবি একৃজিবিশন হয়, আমি দেখতে গেছি ; অমিয় বললে, “আমায় গুরুদেবের ছবি বুঝিয়ে দিন। বললুম, দেখে বাপু, খুড়ো-ভাইপোর কথা কাগজে যদি বের না কর তবে এসে আমার সঙ্গে। তাকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে ছবি দেখাতে লাগলুম। তা ওইখানেই একটি ছবি দেখি ; ছোট ছবিখানা, কলম দিয়ে আঁকা— একটি ছেলে, পিছনে অনেকগুলো লাইনের আঁচড়। ছেলেটি লাইনের জালে আর জঙ্গলে আটক পড়ে থ হয়ে দাড়িয়ে আছে। বললুম অমিয়কে, দেখে, এ কি আর সবাই বুঝতে পারে? পরীস্থানে ঢুকলে আমার অবস্থ হত ঠিক তেমনি। এখন যখন দেখি b>'R