পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-হয় তাও জানি । চলি চলি পা নেই– বড়ো বড়ো সিড়ির চার-পাচট ধাপ লাফিয়ে পড়ি। জেনেছি কঁাচ পেয়ার লুন দিয়ে খেতে লাগে ভালো ; ডাক্তারের রেড মিকৃশ্চার চিংড়ি মাছের ঘি নয়, কিন্তু বিশ্বাদ বিশ্রী জিনিস । দুধের সর ভালোবাসি কিন্তু দাসীরা কেউ সেটাতে এক-একদিন ভাগ বসায় তো ধরে ফেলি । কেবল একটা কথা থেকে থেকে ভুলতে পারিনে— আমি ছোটো ছেলে । অনেকদিন লাগছে, বড়ো হতে, গোপদাড়ি উঠতে, ইচ্ছামতে নির্ভয়ে পুকুরের এপার-ওপার করতে, চেতলার ছাতে উঠে ঘুড়ি ওড়াতে এবং তামাক খেতে বিষ্টতে ভিজতে । বাড়ির চাকরগুলো স্বাধীনভাবে রোদ পোহীয়, বিষ্টিতে ভেজে, ছোলাভাজ খায় । পুকুরে নামে ওঠে, তামুক খায়, ফটকের বাইরে চলে যায় গোল-পাতার ছাতা ঘাড়ে হাটতে হাটতে— এ-সব কেবলই মনে পড়ায় বড়ে হই নি, ছোটোই আছি— বুঝি বা এমনই থাকব চিরদিন তেতলায় ধরা। সেই সময় সেই বহুকাল আগের একটা ঝড় পাঠালেন আমাকে দেখতে চমকি দেবী । ঝড়টা এসেছিল রাতের বেলায় এটুকু মনে আছে, তা ছাড়া ঝড় আসার পূর্বের ঘটনা, ঘনঘটা, বজ্রবিদ্যুৎ, বৃষ্টি, বন্ধ-ঘর, অন্ধকার কি আলো কিছুই মনে নেই। ঘুমিয়ে পড়েছি, তখন উঠল তেতলায় ঝড়। কেবলই শব্দ, কেবলই শব্দ। বাতাস ডাকে, দরজা পড়ে ; সিড়িতে ছুটোছুটি পায়ের শব্দ ওঠে দাসী চাকরদের । হঠাৎ দেখেও ফেললেম চিনেও ফেললেম— দুই পিসিম, দুই পিসেমশায়, বাবামশায়, আর মাকে, যেন প্রথম সেইবার । তিনতলায় এ-ঘর ও-ঘর সেঘর সবকটা ঘরই যেন ছুটোছুটি করে এসে একসঙ্গে একবার আমাকে দেখা দিয়েই পালিয়ে গেল । এর পরেই দেখছি, বড়ো সিড়ির মাঝে একেবারে চেতলার ছাত থেকে মোট একগাছ শিকলে বাধা লোহার গির্জের চূড়োর মতো সেকেলে পুরোনো লণ্ঠনটাকেঃনিয়ে শিকলমৃদ্ধ বিযম দোলা দিচ্ছে ঝড় । নন্দ ফরাশ– অfমাদের লণ্ঠনটাকেই ভালোবাসে সে, সরু একগাছা শনের দড়া দিয়ে কোনোরকমে শিকল-সমেত লণ্ঠনটাকে টেনে বেঁধে ফেলতে চাচ্ছে সিড়ির কাটরায় । তুফানে পড়লে বজরাকে যে-ভাবে মাঝি চায় ডাঙায় আটকে ফেলতে, ঠিক তেমনি ভাবট তার। - 8 ર