নিয়ে যেই না মেরেছি কাঠের ওপর এক ঠেলা, এই দেখে সেই দাগ, বাটালি একেবারে বা হাতের বুড়ে আঙুলের মাঝ দিয়ে চলে গেল অনেকটা অবধি তখনি আমি বুড়ে আঙল চুষতে চুষতে দে ছুট সেখান থেকে। মিস্ত্রির এসে কাজ করতে যাবে, দেখে ফোটা ফোটা রক্ত সে জায়গায় ছড়ানো। কী ব্যাপার, কে কী কাটল ? জানা কথা, বোম্বেটে ছাড়া এ আর কারোর কাজ নয়। বাবামশায় ডেকে বললেন, ‘দেখি তোর আঙুল। আমি তো ভরে জড়োসড়ো, না জানি আজ কী ঘটে যায় আমার কপালে। কতরকম দুষ্টবুদ্ধিই জাগত তখন মাথায়। বাবামশায়ের কাছে পোষা ক্যানারি, খাচাভর । শখ গেল তাদের ছেড়ে দিয়ে দেখতে হবে কেমন করে ওড়ে। টুনিসাহেব, এক ফিরিঙ্গি ছোড়া, আসে প্রায়ই বাবামশায়ের কাছে শ্রীরামপুর থেকে। পাখির শখ ছিল তার। মাঝে মাঝে স্থবিধেমত দু-একটি দামি পাখিও সরায়। সেই সাহেব একদিন এসেছে ; তাকে ধরে পড়লুম, দাও-না ক্যানারি পাখির খাচা খুলে । বেশ উড়বে পাখিগুলো । জাল আছে এখানে, আবার ওদের ধরা যাবে।” অনেক বলা-কওয়ার পর সাহেব তো দিলে খাচার দরজা খুলে। ফুরফুরু করে পাখিগুলো সব বেরিয়ে পড়ল—খাচী থেকে বাইরে, মহা আনন্দ। এবার তাদের ধরতে হবে, টুনিসাহেব জাল ফেলছে বারে বারে, কিছুতেই তারা ধরা দেয় না । শেষে সে তো জাল-টাল ফেলে দিয়ে চম্পট ; ধরা পড়লুম আমি। এইরকম সব ইচ্ছে ছেলেবয়সে হত। ইচ্ছে হল কাঠবেড়ালির চল দেখব, খরগোশের লাফ দেখব, অমনি তাদের ঘরের দরজা খুলে দিতুম বাইরে বের করে। ইচ্ছে হত তো, করব কী, কী বলে অভিজিৎ ? ওকি ও, স্তাঙতি, সোয়েটার এটে এসেছ এরই মধ্যে ? আমাদের ছেলেবেলায় কাতিক মাসের আগে গরম কাপড়ের সিন্দুকই খুলত না ম্যালেরিয়া হলেও। সাদাসিধে ভাবেই মানুষ হয়েছি আমরা। তখন এত উলের ফ্রক, শার্টমাট, সোয়েটার, গেঞ্জি, মোজ পরিয়ে তুলোর হাসের মতে সাজিয়ে রাখবার চাল ছিল না। খুব শীত পড়লে একটা জামার উপরে আর-একটা শাদ জাম, তার উপরে বড়োজোর একটা বনাতের ফতুয়, এই পর্যস্ত। চীনেবাড়ির জুতো কখনো কচিৎ তৈরি হয়ে আসত -তা সে কোন আলমারির চালে পড়ে থাকত খবরই হত না, খেলাতেই মত্ত । রাত্রে ঘুমোবার আগে দাসীরা আমাদের খানিকট দুধ খাইয়ে মশারির S > 8
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২১১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।