ভিতরে ঠেলে দিয়ে থাবড়ে থুবড়ে শুইয়ে চলে যেত। তাদেরও আবার নিজেদের একটা দল ছিল । রাত্তিরবেলা দাসীরা সব একসঙ্গে হয়ে, বারান্দায় একটা লম্ব দোলন ছিল, তাতে বসে গল্পগুজব হাসিতামাশা করত। অন্দিবুড়ি আসত রাত্রে, সে যা চেহারা তার— কপালজোড়া সি দুর, লাল টক্টক্ করছে, গোল এত্ত বড়ো মুখোশের মত মুখ, যেন আহলাদী পুতুলকে কেউ কালি মাখিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। দেখতে যদি তাকে রাত্তিরবেলা । সেই আন্দিবুড়ি দক্ষিণেশ্বর থেকে আসত মায়েদের শু্যাম-সংগীত শোনাতে, আর পয়লা নিতে । তার গলার স্বর ছিল চমৎকার। সে যখন চাদের আলোতে বারান্দার দোলনাতে চুল এলিয়ে বসে দাসীদের সঙ্গে গল্প করত, মশারির ভিতর থেকে ঝাপসা ঝাপস দেখে মনে হত, যেন সুব পেত্নী, গুজগুজ, ফুসফুস করছে। তখন ওই একটা শব্দ ছিল দাসীদের কথাবার্তার— গুজগুজ, ফুসফুল। বেশ একটু স্পষ্ট স্পষ্ট কানে আসত। ঘুমই হত না । মাঝে মাঝে আমি কুঁই কুঁই করে উঠি, পদ্মদাসী ছুটে এসে মশারি তুলে মুখে একটা গুড়-নারকেলের নাডু, তাদের" নিজেদের খাবার জন্তেই করে রাখত, সেই একটি মুখে গুজে দেয় ; বলে, ঘুমে। নারকেল নাডুটি চুষতে থাকি। পদ্মদাসী গুন গুন করে ছড়া কাটে আর পিঠ চাপড়ায় ; এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ি। তার পরে এক ঘুমে রাত কাবার । তুমি তো অন্ধকার রাত্রে রাস্তায় ভূতের ভয় পাও ; আমার পদ্মাসী আর আন্দিবুড়িকে দেখলে কী করতে জানি নে। দুজনের ঠিক এক চেহারা। আন্দিবুড়ি ছিল কালোরঙের আহলাদা পুতুল, আর আমার পদ্মদাসী ছিল যেন আগুনে ঝলসানো পদ্মফুল । ভালো লাগত আমার দুজনকেই। তাই তাদের কথা এখনো মনে পড়ে। সেই আমাকে মানুষ করা পদ্মদাসীর শেষ কী হল শোনে। একদিন সকালে দাড়িয়ে আছি তেভলায় সিড়ির রেলিং ধরে ; সিড়ি বেয়েও তখনো নামতে পারি নে দোতলায়। আমি দাড়িয়ে দেখছি ভো দেখছিই। মস্ত বড়ো সিড়ির ধাপ ঘুরে ঘুরে নেমে গেছে অন্ধকার পাতালের দিকে । এমন সময়ে শুনি লেগেছে ঝুটোপুটি ঝগড়া পদ্মদাসীতে আর মা'র রসদাসীতে দোতলায় সিড়ির চাতালে। এই হতে হতে দেখি রসদাসী আমার পদ্মাসীর চুলের মুঠি ধরে দিলে দেয়ালে মাথাটা ঠুকে । ফটাস করে একটা শব্দ শুনলাম। তার পরেই দেখি পদ্মদাসীর মাথা মুখ বেয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। এই দেখেই আমার চীৎকার, “আমার দাসীকে S Sét
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২১২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।