মেরে ফেললে, মেরে ফেললে। পদ্মাসী আমার কায় শুনে মুখ তুলে তাকালে । আলুখালু চুল, রক্তমুখী চেহারা, চোখ দুটো কড়ির মতো শাদী। তার পর কী হল মনে নেই। খানিক পরে পদ্মদাসী এল, মাথায় পাট বাধা । আমায় কোলে নিয়ে দুধ খাইয়ে দিয়ে চলে গেল। সেই যে আমার কাছ থেকে গেল আর এল না। শুনলুম দেশে গেছে। তখন গরমি কালটা অনেকেই গঙ্গার ধারে বাগানবাড়িতে গিয়ে কাটাতেন । কোন্নগরের বাগানে বাবামশায় যাবেন, ঠিক হল। মা পিসিমা সবাই যাবেন ; সঙ্গে যাব আমি আর সমরদ। দাদা থাকবেন বাড়িতে ; বড়ো হয়েছেন, স্কুলে বান রোজ, বাগানে গেলে পড়াশুনোর ক্ষতি হবে । আমার আনন্দ দেখে কে । কাল সকালবেলায় যাব, কিন্তু রাত,পোহায় না। ঘুমোব কী, সারা রাত ধরে ভাবছি কখন ভোর হয় । বাবামশায় ওঠেন রোজ ভোর চারটের সময়ে। উঠে হাতমুখ ধুয়ে সিড়ির উপরে ঘড়ির ঘরে বসে কালী সিংহের মহাভারত পড়েন, সঙ্গে থাকেন ঈশ্বরবাবু। ওই একটি সময়ে আমরা বাবামশায়ের কাছে যেতে পেতুম। চাকররা আমাদের ভোর না হতে তুলে হাতমুখ ধুইয়ে নিয়ে আসত বাবামশায়ের কাছে। তিনি পড়তেন, আমাদের শুনতে হত। এই গল্প শোনা দিয়ে শিক্ষা শুরু করেছি তখন । কোনো-কোনোদিন ভালো লাগে গল্প শুনতে, কোনোদিন ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে। মাঝে মাঝে বাবামশায় খানিকট পড়ে সমর্যাকে পড়তে দেন। বলেন, ‘নাও, এবার তুমি পড়ে । সমরদ সেই মস্ত মোটা মহাভারতের বই হাতে নিয়ে বেশ গড়, গড়, করে পড়ে যান। আমাকে কিন্তু বাবামশায় কোনোদিন বলতেন না পড়তে। বললে কী মুশকিলেই পড়তুম তখন বলে। তো। এখন কোন্নগরে তো যাওয়া হবে— কত দেরি করেছিল সেদিন সকালটা আসতে। যেমন রামলাল ডাক ‘ওঠে", অমনি তড়িঘড়ি বিছানা থেকে লাফিয়ে পড়ে তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে ইজের কামিজ বদলে তৈরী হয়ে নিলুম। লোকজন আগেই চলে গেছে বাগানে। এবার আমরা যাব। শাদী জুড়িঘোড় জোত মস্ত ফিটন দাড়ালে৷ দেউড়িতে ভোর পাচটায়। আমরা উঠলুম তাতে। বাবামশায় বসলেন পিছনের লীটে, আমাদের বসিয়ে দিলেন সামনেরটায়। ছ পাশে বসলেন আরো দুজন, পাছে আমরা পড়ে যাই। সেকালের গাড়িগুলির ছু পাশ থাকত খোলা— একটুতেই পড়ে যাবার সম্ভাবনা। মা পিসিম আগেই >\>\No
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২১৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।