পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রওনা হয়েছেন বন্ধ আপিলগাড়িতে। আমাদের ফিটনের পিছনে দুই-দুই সহিল হাকছে পইস্পইল; ঘোড়া পা ফেলছে টগবগ, টগবগ, গাড়ি চলতে লাগল জোড়াসাকোর গলির মোড়ে শিবমন্দির পেরিয়ে । বড়ো রাস্তার তেলের আলোগুলি তখনো জলছে, চার দিক আবছা অন্ধকার। ঘুমন্ত শহরের মধ্যে দিয়ে গঙ্গার উপরে হাওড়ার পুলের মুখে এলুম। দূর থেকে দেখি পুলের উপরে উচু ছটে প্রকাও লোহার চাক, তার আর্ধেক দেখা যাচ্ছে। হাওড়ার পুল দেখি সেই প্রথম, আমি তো ভয়ে মরি। ওই চাকা দুটোর উপর দিয়েই গাড়ি যাবে নাকি ? যদি গাড়ি পড়ে যায় গড়িয়ে গঙ্গায় ? যতই গাড়ি এগোয় ততই ভয়ে জু হাতে গাড়ির গদি শক্ত করে ধরে আঁটপাট হয়ে বসি, শেষে দেখি গাড়ি ওই চাকা দুটোর মাঝখান দিয়ে চলে গেল ! চাকা দুটোর মাঝখানে যে অমনি সোজা রাস্ত আছে গাড়ি যাবার, তা ভাবতেই পারি নি আমি তখন । হাওড়ার পুলের অপর মুখে টোলম্বর পেরিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলুম, বড়ো বড়ো গাছের নীচ দিয়ে, গায়ের ভিতর দিয়ে— গীগুলি তখনো জাগে নি ভালো করে, মাকড়শার জালের মত ধোয়ার মধ্যে দিয়ে অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তার মাঝ দিয়ে চলেছি আমরা। কখনো-ব থেকে থেকে দেখা যায় গঙ্গার একটুখানি ; ভাবি বুঝি এসে গেলুম বাগানে। আবার বাক ঘুরতেই গঙ্গা ঢাকা পড়ে গাছের ঝোপের আড়ালে । শালকের কাছাকাছি এসে কী স্বন্দর পোড়ামাটির গন্ধ পেলুম । এখনো মনে পড়ে কি ভালো লেগেছিল সেই সোদা গন্ধ। সেদিন গেলুম ওই রাস্ত দিয়ে বালিতে ; কিন্তু সেই চমৎকার পল্লীগ্রামের স্বগন্ধ পেলুম না। সেই শালকেকে চিনতেই পারলুম না । শহর যেন পাড়াগাকে চেপে মেরেছে। আশেপাশে গলিঘুজি, নর্দমা। মাঝরাস্তায় ঘোড়া বদল করে আবার অনেকক্ষণ ধরে চলতে চলতে পৌঁছলুম সবাই কোন্নগরের বাগানে। তখন মোটরগাড়ি ছিল না যে এক ঘণ্টায় পৌছে দেবে শহর থেকে বাগানে। সে ভালো ছিল, ধীরে ধীরে কত কী দেখতে দেখতে যেতম। গায়ের মেয়ের পুকুরঘাটে গা ধুতে নেমেছে, পাঠশালায় চলেছে ছেলেরা সরু সরু লাল রাস্ত বেয়ে, মাঝে মাঝে এক-একখানা হাটুরে গাড়ি চলে যাচ্ছে আমাদের গাড়ি বাচিয়ে শহরের দিকে। কোন এক বুড়োমানুষ ঘরের দাওয়ায় উবু হয়ে ইকো টানছে। মুদ্ধির দোকানে মুদি বাপ তুলছে। বঁাশঝাড়ে সকালের আলো ঝিলমিল করছে; একটি দুটি দাড়কাক ডাকছে সেখানে। রথতলায় রখটা খাড়া রয়েছে। এমনি কত কী እ>ፃ