পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বন্দর স্বন্দর দৃপ্ত ! হঠাৎ দেখা দিল ধানখেতের প্রকাও সবুজ, তার পরই কোংরঙের ইটখোলা — সেখানে পাহাড়ের মতো ইটের পাজায় আগুন ধরিয়েছে, তা থেকে ধোয় উঠছে আস্তে আস্তে আকাশে। তায় পরই কোন্নগরের বাগান আমাদের। দু-থাক ঢালুর উপরে শাদা ছোট্ট বাড়িখানি। উত্তর দিকে মস্ত ছাতার মতো নিচু একটি কঁঠালগাছ। বাগানবাড়ির সামনে দাড়িয়ে বুড়ে চাটুজ্জেমশাই – শাদা লম্বা পাকা দাড়ি, মাথায় ঝুটি বাধা, হাতে একটি গেটেবশের লাঠি, ধবধবে গায়ের রঙ, যেন মুনিঋষি। আমাদের কোলে করে গাড়ি থেকে নামিরে নিলেন । - গঙ্গার পশ্চিম পারে আমাদের কোন্নগরের বাগান, ও পারে পেনিটির বাগান, জ্যোতিকাকামশায় সেখানে আছেন । কোনোদিন এপার থেকে বাবামশায়ের পানসি যায়, কোনোদিন-বা ওপার থেকে জ্যোতিকাকামশায়ের পানসি আসে ; এমনি যাওয়া-আসা । বন্দুকের আওয়াজ করে সিগনেলে কথা বলতেন তারা । একবার আমায় দাড় করিয়ে আমার কাধের উপর বন্দুক রেখে বাবামশায় বন্দুক ছোড়েন, কোন্নগরের বাগান থেকে ও পারে। জ্যোতিকাকামশায় বন্দুকের আওয়াজে তার সাড়া দেন। কানের কাছে বন্দুকের গুডুম গুডুম আওয়াজ— গুলি চলে যায় কানের পাশ দিয়ে, চোখ বুজে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে থাকি । বাবামশায়ের তয়ে টু শব্দটি করি নে। আসলে আমায়সাহসী করে তোলাই ছিল তার উদ্দেশ্য ; কিন্তু তা হতে পেল না। বারামশায়ের সীতারেও খুব আনন্দ। সীতরে তিনি গঙ্গা পার হতেন । আমাকেও সাতার শেখাবেন ; চাকরদের হুকুম দিলেন, তারা আমার কোমরে গামছা বেঁধে জলে ছুড়ে ছুড়ে দেয়। সাতার দেব কি, ভয়েই অস্থির । কোনো রকম করে আঁচড়ে পাচড়ে পাড়ে উঠে পড়ি । একটি ভারি স্বন্দর ছোট টাটুঘোড়ার গাড়ি । সেটি ছিল ছোটোলাট সাহেবের মেমের ; নিলামে কিনেছিলেন বাবামশায় । সে কি আমাদের জন্তে ? মোটেও তা নয় । কিনেছিলেন মেয়েদের জন্যে ; স্থনয়নী বিনয়নী গাড়িতে চড়ে বেড়াবে। কোন্নগরে সেই গাড়িও যেত আমাদের জন্যে। ছোট্ট টাটুঘোড়ার গাড়িতে চড়ে আমরা রোজ সকালে বেড়াতে যাই। বাগানের বাইবেই কুমোরবাড়ি— চাকা ঘুরছে, সঙ্গে সঙ্গে খুরি গেলাস তৈরি হচ্ছে। ভারি মজা লাগত দেখতে ; ইচ্ছে হত ওদের মতে চাকা ঘুরিয়ে অমনি খুরি গেলাস তৈরি করি। >>わー