পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঝে মাঝে বড়ো জুড়িঘোড়া স্থাকিয়ে আসেন উত্তরপাড়ার রাজা । আমার টাটুঘোড়া ভয়ে চোখ বুজে রাস্তার পাশে এসে দাড়ায়। জুড়িগাড়ির ভিতরে বসে বৃদ্ধ ডেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কার গাড়ি যায় ? কার ছেলে এরা ? চোখে ভালো দেখতে পেতেন না । সঙ্গে যারা থাকে তারা বলে দেয় পরিচয় । শুনে তিনি বলেন, “ও, আচ্ছা আচ্ছ, বেশ, এসেছ তা হলে এখানে। বোলো একদিন যাব আমি। র্তার জুড়িঘোড়া টগ, বগ, করতে করতে তীরের মতো পাশ কাটিয়ে চলে যায় – আমার ছোট টাটুঘোড়া তার দাপটের পাশে থাটাে হয়ে পড়ে। দেখে রাস্তার লোক হাসে। যেমন ছোট্ট বাবু তেমনি ছোট্ট গাড়ি, ছোট ঘোড়াটি — সহিসটি খালি বড়ে ছিল, আর সঙ্গের রামলাল চাকরটি । কোন্নগরে কী আনন্দেই কাটাতুম। সেখানে কুলগাছ থেকে রেশমি গুটি জোগাড় করে বেড়াতুম দুপুরবেলা। প্রজাপতির পায়ে স্থতো বেঁধে ওড়াতুম ঘুড়ির মতো। সন্ধেবেল বাবামশায়, মা, সবাই, ঢালুর উপরে একটি চাতাল ছিল, তাতে বসতেন। আমরা বাগানবাড়ির বারান্দার সিড়ির ধাপে বসে থাকতুম গঙ্গার দিকে চেয়ে— সামনেই গঙ্গ। ঠিক ওপারটিতে একটি বাধানে। ঘাট ; তিনটি লাল রঙের দরজা-দেওয়া একতলা একটি পাকা ঘর। চোখের উপর স্পষ্ট ছবি ভাসছে ; এখনো ঠিক তেমনি একে দেখাতে পারি। চেয়ে থাকি সেই ঘাটের দিকে লোকেরা চান করতে আসে ; কখনো-বা একটি দুটি মেয়ের মুখ দরজা খুলে উকি মারে, আবার মুখ সরিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় । আর দেখি তবৃতবু করে গঙ্গা বয়ে চলেছে। নৌকো চলেছে পরপর – কোনোট পাল তুলে, কোনোট ধীরে, কোনোটা-বা জোরে হু-হু করে। যেদিন গঙ্গার উপরে মেঘ করত দেখতে দেখতে আধখানা গঙ্গা কালো হয়ে যেত, আধখান। গঙ্গ। শাদা ধব, ধব, করত ; সে কী যে শোভা । জেলেডিঙিগুলো সব তাড়াতাড়ি ঘাটে এসে লাগত ঝড় ওঠবার লক্ষণ দেখে। গঙ্গা হয়ে যেত খালি। যেন একখান কালো-শাদা কাপড় বিছানো রয়েছে। এই গঙ্গার দৃপ্ত বড়ো চমৎকার লাগত। গঙ্গার আর-এক দৃগু, সে স্নানযাত্রার দিনে। দলের পর দল নেীকে বজরা, তাতে কত লোক গান গাইতে গাইতে, হল্লা করতে করতে চলেছে। ভিতরে ঝাড়গণ্ঠন জলছে, তার আলো পড়েছে রাতের কালে জলে। রাত জেগে খড়খড়ি টেনে দেখতুম, ঠিক যেন একখানি চলন্ত ছবি। এমনি করে চলত আমার চোখের দেখা সারাদিন ধরে। রাত্রে যখন ు సెమా