যার কাজে লাগতম। এমনি নটা দশটা সাড়ে-দশটা বাজল, কাছারি খুলল, আমরা খেয়েদেয়ে স্কুলে গেলাম। তার পর আবার ঘণ্টা পড়ত বেলা তিনটেয়। স্কুলের গাড়ি ফিরত, বৈকালিক জলযোগের ব্যবস্থা হত, হাওয়া খেতে যাবার জন্তে গাড়ি জোড়া হত, আমরা খেলা জুড়তুম বাগানে ছুটোছুটি । এমনি চলত নটা পর্যন্ত। ওই এক ঘণ্টার শব্দ দুটে বাড়ির সব লোককে যেন চালাচ্ছে। রাত নটায় ঘণ্টা বাজত নিদ্রার সময় এল এই কথা জানিয়ে । এই ছিল তখন । তুমি কি ভাবছ সামান্য বাড়ি ছিল ? হারিয়ে যাবার ভয় হত এ-ঘর ও-ঘর ঘুরে আসতে। তখনকার দিনে মহল ভাগ করে বাস করার প্রথা ছিল। মোটামুটি বড়ো ভাগ ছিল অন্দরমহল আর বারমহল, তার ভিতরে আবার ছোটো ছোটো ভাগ – রান্নাবাড়ি, গোলাবাড়ি, পুজোবাড়ি, গোয়ালবাড়ি, আস্তাবলবাড়ি, এমনি কত বাড়ি। তার মধ্যে আবার কত ঘর ভাগ – ভিণ্ডিখান, তোশাখানা, বাবুর্চিখান, নহবতখান, দপ্তরখানা, কাছারিখানা, স্থলঘর, নাচঘর, দরদালান, দেউড়ি ; যেন অনেক খানাখন্দ নিয়ে একটা তল্লাট জুড়ে একখান ব্যাপার । তেতলায় অন্দরমহল, দোতলায় বারান্দা। একতলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দপ্তরখানা, দক্ষিণ-পূব দিকে ছোটোপিসেমশায়ের আপিসদর । তিনি লম্বী একটা খাতায় ডায়েরি লিখেই যাচ্ছেন— পাশে গিয়ে দাড়াই, একবার তাকিয়ে আবার লেখায় মন দেন। বলেন, ‘কী, এসেছিস ? আচ্ছ। ’ বলে একমুঠো পাতলা পাতলা লঙ্কুেলের মতে ওয়েফার হাতে দিয়ে বিদেয় করেন, বলেন, ‘দেখ্রিস, খাল নে যেন।" মাঝখানে যে বড়ো হলঘরট সেটা তোশাখানা । তোশাখান চাকরদের আডডাঘর। বাবামশায়ের গোবিন্দ চাকর তোশাখানার সর্দার। অন্ত চাকররা তাকে ভয় করে চলে। দাদার গদাধর চাকর – এমন বজাত সে, তাকে ষা ভয় করি সবাই । দারুণ প্রহার করে আমাদের। চেহারাও তেমনি, নর্মাল স্কুলের লক্ষ্মীনারায়ণ পণ্ডিতের মতো ভীষণ । বাড়ির পুরানো চাকর। একবার দেশে গেল, আর ফিরে এল না। কী হল গদার, সে আসছে না কেন ? গদা বলেই ডাকত সবাই তাকে। শোনা গেল মারা গেছে সে ; বুড়ো হয়েছিল, মাঠেই মরে পড়ে ছিল, শেয়াল তাকে খেয়ে সাফ করে ফেলেছে । শিশুমন, তার দৌরাত্মিতেই অস্থির ছিল সারক্ষিণ, মনে মনে ভাবলুম, বেশ হয়েছে, যেমন আমাদের মারত, আপদ গেছে। ર ૦ ૨
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২১৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।