পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোনদিন এর আগে জানিয়েছিল শিকলি, লণ্ঠন, সিড়ি ও ফরাশ আপনআপন কথা আমাকে তা একটুও মনে নেই, কিন্তু এটা বেশ মনে হচ্ছে সেই প্রথমে গিয়ে পড়লেম দোতলায়, বৈঠকখানার মাঝের ঘরটাতে । কে যে আমাকে নামিয়ে আনলে, হাত ধরে টেনে হিচড়ে আনলে, কিম্বা কোলে করে নামিয়ে আনলে তা মনে নেই। কেবল মাঝের ঘরট মনে আছে। সেখানে সারিসারি বিছানা, কোঁচ টেবিল সরিয়ে, মায়ূরের উপর পেড়ে দিতে ব্যস্ত চাকর-দাসীরা । হলদে রঙের বড়ো বড়ে কাঠের দরজা সারিসারি সব ক’টাই বন্ধ হয়ে গেছে। ঘরে বাতাস আসতে পারছে না, চাকরানীগুলো দুধের বাটি, জলের ঘাট, পানের বাটী, পিতলের ডাবর ঝনঝন করে ফেলে ফেলে জমা করছে ঘরের কোণে । এরই মাঝে মাদুরে বসে দেখছি : মাথার উপরে শাদী কাপড়ের গেলাপমোড় একটার পর একটা বড়ো ঝাড়, দেয়ালে দেয়ালে দেয়ালগিরি, ছোটো বড়ো সব অয়েলপেন্‌টিং বাড়ির লোকের । জানছি বড় যেন একটা কী জানোয়ার — গর্জন করে ফিরছে বন্ধ বাঁড়ির চারদিকে । দরজাগুলোও ধাক্কা দিয়ে কেবলই পথ চাচ্ছে ঘরে টোকবার । এক সময়ে হুকুম হল ছেলেদের শুইয়ে দেবার । দক্ষিণ শিয়রে মায়ের কাছে সেদিন মেঝেতে পাতা শক্ত বিছানায় মুড়ি দিয়ে শুয়ে নিলেম, কিন্তু ঘুমিয়ে গেলেম না। অনেক রাত পর্যন্ত শুনতে থাকলেম— বাতাস ডাকছে, বৃষ্টি পড়ছে, আর দুই পিসি পান-দোক্তা খেয়ে বলাবলি করছেন এমনি আরএকটা আশ্বিনের ঝড়ের কথা । সেই রাতে একটা ইংরিজি কথা জানলেম—‘সাইক্লোন’ । ঝড়ের এক ধাক্কায় যেন বাড়ির অনেকখানি, বাড়ির মানুষদের অনেকখানি, সেইসঙ্গে ঝড়ই বা কী, সাইক্লোনই বা কাকে বলে জানা হয়ে গেল। এক রাত্তিরে যেন মনে হল অনেকখানি বড়ো হয়ে গেছি, জেনেও ফেলেছি অনেকটা— ঘরকে, বাইরেকেও । كالا