বারান্দায় বলে হাত মুখ ধুলে চলবে না। চাকর তরিবত শেখাচ্ছে। সকালে উঠে চানের ঘরে গিয়ে হাতমুখ ধোয় অভ্যেস করতে হচ্ছে। একটিই চানের ঘর নীচে। দাদার ঢুকছেন এক-এক করে। তাদের শেষ না হলে তো আর আমি ঢুকতে পারি নে। অপেক্ষা করছি ভিত্তিখানায়। খুব ভোরেই উঠতে হয় আমাদের। বসে বসে দেখছি। বিশ্বেশ্বর ইকোবরার, কোন রাত থাকতে ওঠে সে। বাবামশায়ের বুদ্ধ, বেয়ার আর বিশ্বেশ্বর এই দুজনে ওঠে সকলের আগে। বাবামশায়ের ছিল খুব ভোরে ওঠা অভ্যেস। বলেছিতে, তিনি কত ভোরে উঠে হাতমুখ ধুয়ে রামায়ণ পড়তে বসতেন। বুদ্ধ, উঠে বাবামশায়ের ঘর খুলে দিত, বিশ্বেখর ফরসি সাজিয়ে নিয়ে উপস্থিত করত। তা সেই ভিণ্ডিখানায় বসে দেখছি, একপাশে দ্বারকানাথ ঠাকুরের আমলের পুরোনো একটা টেবিল, খানকয়েক ভাঙা চেয়ার। টেবিলের উপরে বিশ্ববিয়াসের একটা ছবি, দাউদাউ করে আগুন উঠছে মুখ দিয়ে। তামাক সাজবার ঘর, আগুনের ছবি থাকবে সেখানে । পুরোনো কালের ভালো অয়েলপেটিং । অত ভালো অয়েলপেন্টিং ওরকম করে ফেলে রেখেছিল, তখন অতটা মূল্য বুঝি নি। ত, বিশ্বেশ্বর তো সেই টেবিলের উপরে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে সারি সারি ফরসি সাজিয়ে রেখেছে । দিনরাত সে ওই ভিণ্ডিখানাতেই থাকে; সময়মত তামাক বদলে বদলে দেয় । তার কাজই ভাই । এই বিশ্বেশ্বরই আমাদের তামাক খেতে শিখিয়েছে ; বড়ো হয়েছি— রিশ্বেশ্বর গিয়ে মার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এল। বললে, বাবুর বড়ো হয়েছেন, তামাক না খেলে চলবে কেন ? মা বললেন, ‘তা, ওরা খেতে চায় তে খাওয়া । বাড়ির বাবুরা তামাক না খেলে তারও যে চাকরি থাকে না । নানারকম করে সেজে আমাদের তামাক অভ্যেস ধরিয়েছে, প্রথম দিন তো একবার নল টেনেই কেশে মরি। সে আবার শেখায়, “এ রকম করে আস্তে আস্তে টাকুন। অমন ভড়াক করে টানলে তো কাশি উঠবেই।’ তা ওই ভিণ্ডিখানাও ছিল একটা দস্তুরমত আডডার জায়গা । মণিখুড়ে, নিরুদাদা, ঈশ্বরবাবু, বাড়ির বড়ে ছেলেরা যারা তামাক খাওয়া সবে শিখছেন, সকলেই ঘুরে ফিরে আসতেন। ঈশ্বরবাবু প্রতিদিন সকালে বাবামশায়ের কাছে বসে রামায়ণ পড়া শোনেন । রামায়ণ শেষ হয়ে গেলে বুড়ো একটি লাঠি হাতে নিয়ে ঠকাস ঠকাস করে সিড়ি দিয়ে নেমে আসেন নীচে ভিণ্ডিখানায়। ૨ લા કુ
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২২১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।