পাঞ্জাবকেশরী বসে আছে ঢাল-তলোয়ার পাশে নিয়ে। শুভ্রবেশ তার, গলায় মোট মোটা আমড়ার আটির মতো সোনার কষ্ঠি, হাতে বালা, কোমরে গোজ বাকী ভোজালি, সে ছিল দেউড়ির শোভা । পশমের মতো শাদা লম্ব দাড়ি কী স্বন্দর লাগত। ছেলে-বুদ্ধি – দেখেই একদিন কী ইচ্ছে হল, হাত দিয়ে ধরে দেখব তা । যেই-না মনে হওয়া খপ করে গিয়ে তার দাড়ি চেপে ধরলুম মুঠোর মধ্যে। মনোহর সিং অমনি গর্জন করে কোমরের ভোজালিতে হাত দিলে। আমি তো দে ছুট একেবারে দোতলায়। ভয়ে আর নামি নে একওলায়। প্রাণের ভিতর ধুকধুক্ করছে, কী জানি কী অন্যায় বুঝি করে ফেলেছি। এবার আমার দরোয়ানজি কেটেই ফেলবে। উকিঝু কি দিই, মনোহর সিং আমায় দেখতে পেলেই গর্জন করে ওঠে, আর আমার ভয়ে, প্রাণ শুকিয়ে যায়। রামলীল আমায় শিখিয়ে দিলে, ‘দাড়িতে হাত দিয়ে তুমি ভারি দোষ করেছ। যাও, হাত জোড় করে দরোয়ানজির কাছে ক্ষম চেয়ে এসে ।" শেষে একদিন দেউড়িতে গিয়ে ভয়ে ভয়ে অতি কাতর ভাবে দুহাত জোড় করে কচলাতে কচলাতে বললুম, এ ঘরোয়ানজি, মাপ করে, আমার কন্থর হয়ে গেছে। আর এমন কাজ কখনো করব না।’ মনোহর সিং মিটির মিটির হেসে ভারী গলায় বললে, ‘আর করবে না তো ? ঠিক ? আচ্ছ, যাও।” মনোহর সিং-এর ক্ষমা পেয়ে তবে আমার ত্রাস কাটে, দোতলা থেকে নামতে পেরে বাচি । দেউড়িতে মাঝে মাঝে নানায়কম মজার কাও হত । একবার কে একজন এল, সে বাজি রেখে এক মন রসগোল্লা খেতে পারে। ঘোষাল ছিলেন খাইয়ে লোক। তিনি শুনে বললেন, “আমিও খাব। যে হারবে দশ টাকা দ্বও দেবে। এ-বাড়ির ও-বাড়ির যত দরোয়ান এসে ভিড় করল দেউড়িতে। আমরাও ছেলেপিলেরা, গাড়িবারান্দায় ছিল সারি সারি গাড়ি সাজানে, কেউ তাতে উঠে, কেউ পাদনিতে দাড়িয়ে দেখতে লাগলুম। মনোহর সিং-এর সামনে বসে গিয়েছে দুজন রসগোল্লা খেতে । ও দিকে এক পাশে মস্ত কড়াইয়ে হালুইকর এসে চাপালে রস ; তাতে গরম গরম রসগোল্প তৈরি হতে লেগেছে। একজন সমানে তাদের পাতে সেই রসগোল্প তুলে দিচ্ছে, অন্তর গুনছে। ঘোষাল খেয়েই চলেছেন। যত রসগোল্লাই তার পাতে দেওয়া হয় নিরেট স্কৃড়িতে তলিয়ে যায়। খেতে খেতে যখন ষোলো গও রসগোল্প খাওয়া হয়েছে তখন ર ૦ ૧
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২২৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।