ঘোষাল হপ হপ করে হেঁচকি তুলতে লাগলেন। দেওয়ানজি যোগেশদাr: বললেন, ‘জার নয়, ঘোষাল, হেঁচকি তুলে ফেললে, তোমারই হার হল। ঘোষালমশায় হেরে দশ টাকা গুনে দিয়ে উঠে পড়লেন। অন্ত লোকটা শেষ অবধি পুরে পরিমাণ রসগোল্লা খেয়ে আধ কড়াই রস চুমুক দিয়ে টাকা ট্যাকে গু জে চলে গেল । হোলির দিনে এই দেউড়ি গমৃগম কৃরত ; গালে লাল হয়ে যেত মনোহর সিং-এর শাল দাড়ি পর্যন্ত। ওই একটি দিন তার দাড়িতে হাত দিতে পেতুম আবির মাখাতে গিয়ে। সেদিন আর সে তেড়ে আসত না। এক দিকে হত সিদ্ধি গোলা ; প্রকাও পাত্রে কয়েকজন সিদ্ধি ঘুটিছে তো খুঁটছেই । ঢোল বাজছে গামুর গুমু ‘হোরি হায় হোরি হায়’, আর আবির উড়ছে। দেয়ালে ঝুলোনো থাকত ঢোল, হোরির দু-চার দিন আগে তা নামানো হত । বাবামশায়েরও ছিল একটি, সবুজ মখমল দিয়ে মোড়া লাল স্থতোয় বাধা— আগে থেকেই ঢোলে কী সব মাখিয়ে ঢোল তৈরি করে বাবামশায়ের ঢোল যেভ বৈঠকখানায়, দরোয়ানদের ঢোল থাকত দেউড়িতেই। হোরির দিন-ভোরবেলা থেকে সেই ঢোল গুরুগম্ভীর স্বরে বেজে উঠত ; গানও কী সব গাইত, কিন্তু থেকে থেকে ওই ‘হোরি হায় হোরি হায়’ শব্দ উঠত। বেহারাদেরও সেদিন ঢোল বাজত ; গান হত ‘খচমচ খচমচ’, যেন চড়াইপাখি কিচির কিচির করছে। আর দরোয়ানদের ছিল মেঘগর্জন ; বোঝা যেত যে, হ্যা, রাজপুতপাহাড়ীদের জাভিজাত্য আছে তাতে। নাচও হত দেউড়িতে। কোথেকে রাজপুতানী নিয়ে আসত, সে নাচত । বেশ ভদ্র রকমের নাচ । আমরাও দেখতুম। বেহারাদের নাচ হত, পুরুষরাই মেয়ে সেজে নাচত, সে কিরকম অদ্ভুত বীভৎস ভঙ্গির, দু হাত তুলে দু বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ধেই ধেই নাচ আর ওই এক খচমচ খচমচ শব্দ। উড়েরাও নাচত সেদিন দক্ষিণের বাগানে লাঠি খেলতে খেলতে। বেশ লাগত। উড়েদের নাচ আরম্ভ হলেই আমরাও ছুটতুম চিতাবাড়ি দেখতে । দোতলায় বাবামশায়ের বৈঠকখানায়ও হোলির উৎসব হত। সেখানে যাবার হুকুম ছিল না। উকিঝুকি মারভূম এ দিক ও দিক থেকে। আধ হাত উচু আবিরের ফরাস । তার উপরে পাতলা কাপড় বিছানো । তলা থেকে লাল আত ফুটে বের হচ্ছে। ধন্ধুবান্ধব এসেছেন অনেক—অক্ষয়বাবু তানপুর হাতে Հ օԵ,
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২২৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।