চাপলেন। গাড়ি চলল গাড়িবারান্দা ছেড়ে । সমশের তখনো দাড়িয়ে রাশ হাতে কোচ-বাক্সে। কাঠখানা চারখানা চাকার চাপে আর দুবার শব্দ দিলে হুডুছম্ হুডুকুম। ধপাস করে এতক্ষণে সমশের কোচোয়ান কোচবাক্সে জাকিয়ে বসল যেন সিংহাসনে বসলেন আর-এক লক্ষেীয়ের নবাব । আমাদের ছিল রামু কোচোয়ান। জাতে হিন্দু, কিন্তু লুঙ্গি পরত সে। কোচোয়ান হলেই লুঙ্গি পরতে হবে, এই সে জানত। ছোট্ট একটি ফিটন গাড়ি, আমরা তাতে চড়ে বিকেলে চক্করে ঘুরে বেড়াতুম—হাওয়া খাওয়া হয়ে যেত। বেশির ভাগ স্থনয়নী বিনয়িনী চড়ত সেই গাড়িতে। আস্তাবলে কতরকম দৃশ্ব দেখবার ছিল—কত লোকের, এ বাবুর, ও বাবুর গাড়ি-ঘোড়া থাকত সেখানে। বেচারামবাৰু আসতেন বড়শে বেহাল থেকে বুধবারে বুধবারে দাদাদের ব্রাহ্মধর্ম পড়াতে । তার গাড়িটিও যেমন ঘোড়াটিও ছিল তেমনি ছোট। আমরা বলাবলি করতুম, ‘ওইটুকু গাড়ির ভিতরে বেচারামবাবু ঢোকুেন কেমন করে? এ ছিল এক বড়ো সমস্ত আমাদের কাছে। দূর থেকে গাড়ি আসছে দেখেই চিনতুম—ওই আসছেন বেচারামবাবু, ওই-যে তার গাড়ি দেখা যায়। তখন জ্যোতিকামশায় কোথেকে পুরোনো একটা মরচে ধর বয়লার কিনেছেন, “সরোজিনী ষ্ট্রীমারে বসানো হবে । বয়লারটা পড়ে থাকে গোলচক্করে। একদিন বেচারামবাবু এসেছেন , দাদাদের পড়িয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন, ঘোড়া আর খুজে পান না । ঘোড়া গেল কোথায়, দেখ ! ঘোড়া হারিয়ে গেছে। বেচারামবাবু হতভম্ব। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখা গেল ঘোড়া বয়লারের ভিতর ঢুকে স্থির হয়ে দাড়িয়ে । ঘোড়াটা ঘাস খেতে খেতে কখন বয়লারের ভিতরে ঢুকে গেছে আর বের হতে পারছে না । শেষে সহিস লেজ ধরে তাকে বের করে বয়লারটার ভিতর থেকে । নহবতখানার নীচে ফটকের পাশেই নন্দ ফরাসের ঘর। ঘরের সামনেই কুয়ে, অনেক কালের পুরোনো, কলের জল হওয়ার আগেকার। কুয়োর পাশে মস্ত সবজিবাগান, খুব নিচু পাচিল-ঘেরা। তার পশ্চিমে ভাগবত মালী আর বেহারাদের ঘর এক সারি। তার উত্তর-ধারে গোয়াল, গোয়ালের পুত্ব কোণে মস্ত একটা গাড়িখানা। গাড়িখানার গায়ে পাহাড়ের মতো উচু বিচালির স্তৃপ, তার উপরে মেথরদের ছাগলছানাগুলি লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায়। আমরাও উঠতে চেষ্টা করি মাঝে মাঝে। সেটি থেকে একটু দূরে বাড়ির ঈশান কোণে বিরাট & Σ. Σ'
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২২৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।