পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটা তেঁতুলগাছ, সে যে কত দিনের কেউ বলতে পারে না । দৈত্যের হাতের মতো তার মোটা মোট কালে ডাল। এ-বাড়িতে ও-বাড়িতে যত ছেলেমেয়ে জন্মেছি তাদের সবার নাড়ি পোতা ছিল ওই গাছের তলায়। সেই তেঁতুলগাছের ছায়ায় ছির মেথরদের ঘর। তাদের তিন পুরুষ ওখানে বসবাস করছে আমাদের সঙ্গে । তাদের ঘরের পিছনে জোড়াসাকোর বাড়ির উত্তর দিকের পাচিল । তার গায়ে তিনটে বড়ে বড়ো বাদাম গাছ, যেন শহরের আর-সব বাড়ি আড়াল করে মাথা তুলে উত্তর দুয়ার পাহারা দিচ্ছে। চাকররা সেই বাদামগাছ থেকে আমাদের জন্য পাতবাদাম কুড়িয়ে আনে। উত্তরপশ্চিম দিকট। কথায় বোঝাতে হলে তিন-চারটে পাড়ার নাম করতে হয়—মালীপাড়া, গোয়ালপাড়া, ডোমপাড়, এমনি, তবে ঠিক ছবিটা বোঝাতে পারি। আস্তাবলে যেমন ছিল সমশের কোচোয়ান কর্তা, একতলায় নন্দ ফরাস, মালীপাড়ায় রাধ মালী, গোয়ালপাড়ায় রাম গয়ল, তেমনি ডোমপাড়ায় ছিব্রু মেথরের একাধিপত্য। এই এক-এক পাড়ায় এক-এক অধিকারীর কথা বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হয় । দুই-একটা বলি শোনো । নন্দ ফরাসের দরবারের বর্ণনা তো দিয়েছি । সমশের কোচোয়ানের কথাও তো হল । দরোয়ান-বেহারাদের দোলের কথা, মালীদের ‘চিতাবাড়ি তাও বলেছি। এবারে বলি তবে ছির মেথরের চরিত্র। ভাদের ঘর খোলা দিয়ে ছাওয়া ; বাদামতলায় কাত হয়ে পড়েছে ঝড়ে জলে। সারাদিনমান তেঁতুল গাছের ছায়াতেই ঢাকা সেই কোণটা ; রোদ পড়তে দেখি নে। হাংলা কুকুরছানাগুলোর ডাক এসে পৌছয় সে দিক থেকে কানে। কুকুরের তাড়া খেয়ে হাস মুরগি থেকে থেকে র্ক্যা-কা চীৎকার ছাড়ে। সেই ছায়ায় অন্ধকারে ছিকু মেথরের ঘরের দাওয়া দেখা যায়। এক ধারে একটা জলের জাল, আধখানা তার মাটিতে পোতা । সেই ঠাণ্ড জলে কাজের শেষে ছিদ্রু মেথর চান করে দেখি। কালে তার রঙ । ভারি শৌখিন ছিল ছির মেথর । কালে হলেও ছিক্লর চেহারা ছিল বেশ ; কোকড়া কোকড়া চুল, মুখের কাট-কোটও স্বন্দর। বিলিতি মদ খাওয়া তার অভ্যেস ছিল । দেশি মদ ছুত না । বিলিতি মদ খেলেই তার মুখে ফর ফর করে গরম গরম ইংরেজি গালাগাল বের হয়—ড্যাম ইউ রাস্কেল। ইংরেজি বুলি শুনলেই বোঝা যেত লোকটা খেয়েছে । বাড়ি রাস্তাঘাট পরিপাটি রাখা কাজ ছিল তার। সামনের রাস্ত বাট দিয়ে

  • > R