পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উত্তরের ঘর বাড়ি র দক্ষি ৭ জুড়ে ফুলবাগান, পুকুর, গাছপালা, মেহেদির বেড়া ঘেরা সবুজ চক্কর। সেদিকে প্রকৃতির সৌন্দর্য সুষম ও কল্পনা । চাদ ওঠে সেদিকে, স্বর্য ওঠে সেদিকে, মস্ত বটগাছের আড়াল দিয়ে । পুকুরজলে দিনরাত পড়ে আলোছায়ার মায়া। দুপুরে ওড়ে প্রজাপতি, ঝোপে ডাকে ঘুঘু, আর কাঠ-ঠোকরা থেকে থেকে। ময়ুর বেড়ায় পাখনা মেলিয়ে, রাজহংস দেয় সাতার, ফোঁহারাতে জল ছোটে সকাল বিকেল । সারস ধরে নাচ বাদলার দিনে, ঝড়বাতাসে নারকেল গাছের সারি দোল থায় । গরমের দিনে দুপুরে চিল স্থির ডান মেলিয়ে ভেসে ঝিম্ স্বরে ডাক দিয়ে ঘুরে ঘুরে ক্রমেই ওঠে উপরে। পায়রা থেকে থেকে বাক বেঁধে বাড়ির ছাতে উড়ে উড়ে বেড়ায়। কাক উড়িয়ে নেয় শুকনো ডাল মাটি থেকে গাছের আগায় । সন্ধ্যায় ওঠে নীল আকাশের তারা। রাতে ডাকে পাপিয়— কতদূর থেকে কোকিল তার জবাব দেয়— পিউ পিউ, কিউ কিউ ! আবার শেয়ালও ডাকে রাতে, ব্যাঙও বলে বর্ষায় । বেজিও বেরোয়, বেড়ালও বেরোয় থেকে থেকে শিকার সন্ধানে । একটা-একটা নেড়ি কুত্তে, সেও ফাক বুঝে হঠাৎ ঢোকে বাগানে, চারদিক দেখে নিয়ে চট্‌ করে সরেও পড়ে রবাহত গোছের ভাব দেখিয়ে। কিন্তু তখনো ৰাড়ির এই রমণীয় দিকটাতে নেমে যাবার আমার বয়েস হয় নি, উকি দেবারও অবস্থা হয় নি। ওদিকটা ছিল সেকালের নিয়মে বারবাড়ির সামিল। অন্দরে যারা থাকত তার তেতলার টান বারান্দার বন্ধ ঝিলমিল দিয়ে ওদিককার একটু আভাস মাত্র পেতে পারত। কি ছেলে, কি মেয়ে, কি দাসী, কি বউ, কি গিন্নিবাল্লি-– সকলের পক্ষেই এই ছিল ব্যবস্থা । বেশি রাত না হলে দক্ষিণের ঝিলমিল দেওয়া জানল। ক'ট পুরোপুরি খোলা ছিল তখন বেদস্তুর। ওই দিকটা বন্ধ রাখা প্রথা হয়ে গিয়েছিল কতকটা দায়ে পড়েও । এ-বাড়িটা বৈঠকখানা হিসেবে প্রস্তুত করা— এটাকে আমাদের বসতবাড়ি হিসেবে করে নিতে এখানে ওখানে নানা পর্দা দিতে হয়েছে, না হলে ঘরের আবরু থাকে না । বৈঠকখানায় বাস করতে -হবে মেয়েছেলে নিয়ে; সেটা একটা দুর্ভাবনা জাগিয়েছিল নিশ্চয় ; তাই X 6