ছিল, যার রুমালে ল্যাভেণ্ডারের গন্ধ পাবে নিয়ে বাবামশায়ের আলমারিতে তুলে রাখবে। মণিখুড়োর রুমাল নিয়ে একদিন এইরকম তুলে রেখেছে ; বলে, ‘এতে বাবুর খোসবো আছে যে । মণিখুড়ে বলেন, ‘ত, বাবুর কাজ থেকেই চেয়ে নিয়ে খোসবে রুমালে মাখিয়েছিলুম আমি – রুমালট। আমারই। ধোপবাড়ির নম্বর দেখো।' বুদ্ধ, তখন সেই রুমাল ফিরিয়ে দেয় মণিখুড়োকে । বড়ো বিশ্বাসী বেয়ার ছিল, এমন আজকাল আর দেখা যায় না। বাবামশায়ের কোনো জিনিস কখনো এ-দিক ও-দিক হতে পারত না । কেমন সরল বিশ্বাসী ছিল বুদ্ধ, তা বলছি। একবার বাবামশায় গেছেন ইংরেজি থিয়েটারে, আঙলে হীরের আংটি—বনস্পতি হীরে, খুব দামী ; আর হাতে একটি লাঠি, তার মাথায় কাটগ্রাসের একটি লম্বা এসেন্সের শিশি, শখের লাঠি ছিল সেটি। বাবামশায় ফিরে এসে লাঠি আংটি বুদ্ধর হাতে দিয়ে শুয়ে পড়েছেন। কয়দিন পর আংটি দপ্তরখানায় পাঠানো হবে, হীরেট নেই। নেই তো নেই ; কতদিন ধরে খোজাখুজি, কোথায় ষে পড়েছে তার পাত্তা পাওয়া গেল না । গরমিকাল এসে গেল । এই সময়ে বাবামশায় যেমন ফি বছর একবার করে আলমারি খালি করেন তেমনি খালি করছেন—বাবামশায় হাতের কাছে জামা কাপড় যা পাচ্ছেন সব টেনে টেনে ফেলছেন, যে যা পাচ্ছে নিয়ে নিচ্ছে । খালি করতে করতে আলমারিতে বাকি রইল মাত্র কয়েকটি শাদা ধুতি আর পাঞ্জাবি। তার তলা থেকে বের হল সেই হারানো হারে । বাবামশায় সেটি হাতে নিয়ে বললেন, "বুদ্ধ, এই তো সেই হীরে । তুই এখানে রেখে দিয়েছিল, আর এর জন্য কত খোঁজাখুঁজি হচ্ছে। বুদ্ধ বললে, ‘ত, আমি কি জানি ওটি হীরে ? সকালে ঘরে কুড়িয়ে পেলুম, ভাবলুম ঝাড়ের কাচ । তুলে রেখে দিলুম।" এইবার শোনে রান্নাবাড়ির গল্প। গলির ভিতরে ছোট্ট ঘর, অমৃত দাসী সেই ঘরে বসে জাতায় সোনামুগের ডাল ভাঙে আর বাটনা বাটে। এবারে বখন বাড়ি ভাঙে, দেখেই চিনলুম –আরে, এই তো সেই অমৃত দাসীর ঘর, ছেলেবেলায় সেখানে গিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিবিষ্টমনে তার ডাল ভাঙা দেখতুম। সোনার বর্ণ সোনামুগের ডাল জাতার চারি দিক সোনার ঝরনার মতে ঝরে পড়ত। মাঝে মাঝে অমৃত দাসী একমুঠো ডাল হাতে তুলে দিত, বলত, ‘খাবে খোক ? খাও, এই নাও। অল্প অল্প করে সেই ডাল মুখে ফেলে চিবতুত, বেশ লাগত। সেই ঘরটি আর জাতাটি সারাজীবন তাই নিয়েই কেটেছে, তার a > 8
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৩১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।