পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিউজিক ছিল জাতার ঘড়ঘড়ানি। সোনামুগ আর বাটনার হলুদের জল ভেসে যাচ্ছে, কাপড়েও লেগেছে, সোনাতে হলুদে মাখামাখি । এখনো মনে হয় তার কথা ; দুঃখিনী একটি বুড়ির ছবি চোখে ভাসে। বাসনমাজানি এল দুপুরে, বাসন মেজে রেখে গেল যার যার দোরে, সোনার মতো ঝক্কক্ করছে। দুধ জাল দেবার দাসী দুধ জাল দিচ্ছে ; দুধের ফেন তুলছে তো তুলছেই। জাল দিয়ে বাটিতে বাটিতে দুধ ভাগ করে রাখছে। তার পর দিব্যঠাকুর হাত বেড়ি দিয়ে রান্নায় ব্যস্ত । ও দিকটায় আর যেতুমু নী বড়ো । রান্নাবাড়ির ঠিক উপরে ঠাকুরঘর । সেখানে ছোটোপিসিমা ব’সে, মহিমকথক কথকতা করছেন, সিংহাসনে ঠাকুর অলকাতিলকা পরে মাথায় রুপোর মুকুট দিয়ে। এখনো সে-সবই আছে, কেবল ছোটোপিসিমা নেই, মহিম-কথক নেই। সেখানে হত পুরাণের গল্প। সেখান থেকে নেমে এসে ছোটোপিসিমার ঘরে ছবি দেখতুম। একটু আগে যা শুনে আসতুম উপরে, নীচে তারই ছবি সব চোখে দেখতুম। সেই পুরাণের পুথি কিছু এখনো আছে আমার কাছে, ছেলেরা সেদিন কোন কোন থেকে বের করলে । দেখেই চিনলুম, এ যে মহিম-কথকের পুথি, এক-একটি পাতা পড়ে যেতেন কথক-ঠাকুর আর এক-একটি ছবি যেন চোখের সামনে ভেসে উঠত। লাল বনাত একখানা গায়ে দিয়ে বসতেন পুথি পড়তে, হাতে রুপোর আংটি, হাত নেড়ে নেড়ে কথকতা করতেন । রুপোর আংটির বকৃঝকানি এখনো দেখতে পাই । আঁকতে শিখে শে ছবি একখানা এ কেওছিলুম। বাবামশায়ের সকালে মজলিশ বসত দোতলার দক্ষিণের বারান্দায়। দক্ষিণের বাগানে ভাগবত মালী কাজ করে বেড়াত। বাবামশায়ের শখের বাগানের মালী, নিজের হাতে তাকে শিখিয়ে পড়িয়ে তৈরি করেছিলেন । যেখানে যত দুমূল্য গাছ পাওয়া যায় বাবামশায় তা এনে বাগানে লাগাতেন, বাগান সম্বন্ধে নানা রকমের বই পড়ে বাগান করা শিখেছিলেন, ওই ছিল তার প্রধান শখ। কী সুন্দর সাজানো বাগান, গাছের প্রতিটি পাতা যেন কক্কক্‌ করত। হটিকালচারের এক সাহেব বললেন, এ দেশে টিউলিপ ফুল ফোটে না, তারা অনেক চেষ্টা করে দেখেছেন। বাবামশায় বললেন, “আচ্ছা, আমি ফোটাব । বিলেত থেকে সেই ফুলের গেড় আনলেন, নানা-রকমের সার দিলেন

  • :ళt