কোখেকে একটা ভাঙা বেঞ্চি জোগাড় করে তাতে সবকটি ছেলে ঠেসাঠেসি করে বসি, দীপুদা মাস্টার। গলির মোড়ে সেই সময়ে হাক দিতে দিতে ভিতরে আসে চিনেবাদাম, গুলাবি রেউড়ি, ঘুগনিদান, লজেঞ্জুস, কত কী—'খায়-দায় পাখিটি বনের দিকে আঁথিটি’, বেঞ্চিতে ব’সে ব’সে সেই দিকেই নজর আমাদের। কতক্ষণে গুলাবি রেউড়ি চিনেবাদাম-ওয়ালা আসে। দেউড়ির কাছে যেমন তারা এসে দাড়ায়, দে ছুট ইস্কুল-ইস্কুল খেলা ছেড়ে । দীপুদ ভাঙা কাঠের চেয়ারে বসে গম্ভীর স্বরে বলেন, ‘পড়, সবাই।” পড়া আর কী, কোলের উপর ঠোঙা রেখে তা থেকে চিনাবাদাম বের করে ভাঙছি আর খাচ্ছি ; দীপুদার হাতেও এক ঠোঙা, তিনিও খাচ্ছেন। এই হত আমাদের পড়া-পড়া খেলা। একদিন আবার প্রাইজ-ডিষ্ট্রিবিউশন হল । কে প্রাইজ দেবে ? উপরে বারান্দায় পায়চারি করছেন রবিক । তিনি আসতেন না বড়ো আমাদের খেলায় যোগ দিতে । সমান বয়সের ছেলেও তো থাকত এই খেলায়। কিন্তু তিনি ওই তখন থেকেই কেমন একলা-একলা থাকতেন, একলা পায়চারি করতেন। সেখান থেকেই মাঝে মাঝে দেখতেন দাড়িয়ে, নীচে আমরা খেলা করছি। গিয়ে ধরদুম তাকে, ‘আমাদের ইস্কুলে প্রাইজ-ডিষ্ট্রিবিউশন হবে, তোমায় আসতে হবে ।’ রবিক একটু হেসে নেমে এলেন, প্রাইজ-ডিষ্ট্রিবিউশন হল। চিনেবাদাম গুলাবি রেউড়ির ঠোঙা। প্রাইজের পরে আবার তিনি দাড়িয়ে-বক্তৃতাও দিলেন একটি খুব শুদ্ধভাষায় । আহ্বা, কথাগুলো মনে নেই, নয়তো বড়ো মজাই পেতে তোমরা। কালে কালে সেই জোড়াসাঁকোর বাড়ির কত বদলই না হল । আমাদের কালেই সেই তোশাখান হয়ে গেল ড্রামাটিক ক্লাবের নাট্যশালা । ভিণ্ডিখানায় টেবিল পড়ত, খাওয়াদাওয়া হত। দপ্তরখানা হল গ্রীনকুম । দেউড়ি তো উঠেই গেল, ভেঙেচুরে লম্বা ঘর উঠল। খামখেয়ালির বৈঠক বসত সেখানে। একবার বৈকুণ্ঠের খাতা' অভিনয় হল, বাড়ির ছেলেদের দিয়ে করিয়েছিলুম, গাড়িবারান্দায় মনোহর সিং-এর দোল-উৎসব হত যেখানে সেইখানে মস্ত স্টেজ তৈরি হল— ঘোড়াহুদ্ধ গাড়ি সোজা এসে ঢুকল স্টেজে। টং টং করে আপিসফেরত অবিনাশবাবু নামলেন এসে। ব্যাপার দেখে অডিয়েন্স একেবারে অবাক । - কত অভিনয় কত খেলা করে, কত সুখদুঃখের দিন কাটিয়ে, সেই জোড় ૨8br
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।