ما পলতার বাগান মনে প’ড়ে দুঃখও পাচ্ছি আনন্দও পাচ্ছি। কতই-ব বয়েস তখন আমার। বেশ চলছিল, হঠাৎ একদিন সব বন্ধ হয়ে গেল, ঘরে ঘরে তাল৷ পড়ল। বড়োপিসেমশায় ছোটোপিসেমশায় আমাদের সবাইকে নিয়ে বোটে রওনা হলেন। দারুণ ঝড়, নৌকা এ-পাশ ও পাশ টলে, ডোবে বুঝি-ব এইবারে। বড়োপিসিমা ছোটোপিসিম আমাদের বুকে আঁকড়ে নিয়ে ডাকতে লাগলেন, ‘হে হরি ! হে হরি ; এলুম আবার জোড়াসাঁকোর বাড়িতে। দোতলার নাচঘরে ছিল জ্যাঠামশায়ের বড়ে একখানি অয়েলপেটিং, বসে আছেন সামনের দিকে চেয়ে । ছোটোপিসিমা বড়োপিসিমা আছড়ে পড়লেন সেই ছবির সামনে, ‘দাদা, এ কী হয়ে গেল আমাদের ' অদ্ভুত কাণ্ড । যেন চলতে চলতে হঠাৎ সামনে একটা দেয়াল পড়ে গেল ; সব কিছু থেমে গেল, ঘড়িটা পর্যন্ত। বড়ো হয়ে যখন গেলুম পলতার বাগানে, দেখি, বাবার সেই শোবার ঘর ঠিক তেমনি সাজানো আছে, একটু নড় চড়, নেই – দেয়ালে ঘড়িটি ঠিক কাটায় কাটায় স্থির, বাবামশায়ের মৃত্যুর সময়টি তখনো ধরে রেখেছে। ঘরজোড় মেঝেতে শাদা গালচে, তার নকশাট যেন পাথরের চাতালে ফুল পাত হাওয়ায় খসে পড়েছে। দেয়ালে বেলোয়ারি কাচে রঙিন সব ফুলের মালা, বাতিনেবা গোলাপি রঙের ফটিকের ঝাড়, দেয়ালগিরি, পর্দ, সবই যেন তখনো একটা মহা আনন্দ-উৎসব হঠাৎ শেষ হয়ে যাওয়ায় মান বিশৃঙ্খল রূপ ধরে রয়েছে। মা সেখানকার কোনো জিনিস আনতে দেন নি। কিন্তু সেই ঘড়িটি সেবারে আমি নিয়ে আসি, এখনো আছে বেলঘরিয়ার বাড়িতে। আশ্চর্য ঘড়ি — কেমন আপনি বন্ধ হয়ে যায় । সেদিনও বন্ধ হয়ে গেল অলকের মা যেদিন চলে গেলেন, ঠিক জায়গায় কাটার দাগ টেনে । অলকরা চাবি ঘোরায়, ঘড়ি চলে না । অলককে বললুম, ‘ও ঘড়ি তোরা ছুস নে, তোদের হাতে বিগড়ে যাবে। আমার সঙ্গে ওর অনেক কালের ভাব । আমি জানি ওর হাড়হদ ; আমার কাছে দে দেখি নামিয়ে ’ ঘড়িটি নামিয়ে এনে দিলে কাছে। আমি তাতে হাত দেবী মাত্র ঘড়ি নতুন করে আবার চলতে লাগল। বহুকালের জিনিস, অনেক মৃত্যুর সময় রেখেছে এ ঘড়ি। মাসির গরে পড় নি এ ঘড়ির কথা ? দিয়েছি গল্পে চুকিয়ে। এখন আমার ૨ર છ
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।