হয়েছে ওই— গল্পের মধ্যে ধরে রাখছি আমার আগের জীবন আর আজকের জীবনেরও কথা । একটি ভাই ছিল আমার— সকলের ছোটো, দেখতে রোগা টিঙটিঙে, বড়ে মায়াবী মুখখানি। আমরা ছিলুম তার কাছে পালোয়ান। একটু হুমকি দিলেই ভয়ে কেঁদে ফেলত। বাবামশায় খুব ভালোবাসতেন তাকে, আদর করে ডাকতেন ‘র্যাট । তার জন্য আসত আলাদা চকোলেট লজেঞ্জুস, বাবামশায় নিজের হাতে তাকে খাওয়াতেন । মা এক-এক সময়ে বলতেন, এত লসেঞ্জুস খাইয়েই এর রোগ সারে না । বাবামশায়ের র্যাট ছিল তার গোলাপি হরিণেরই সামিল, এত আদর যত্ন । হরিণেরই মতে সুন্দর চোখ দুটো ছিল তার। এখন, সেই ভাই মারা যেতে বাবামশায়ের মন গেল ভেঙে । বললেন, ‘এই জোড়াসাকোর বাড়িতে আর থাকব না ’ পলতায় তখন সবে বাগান কিনেছেন, সবাইকে নিয়ে জোড়াসাঁকোর বাড়ি ছেড়ে উঠলেন গিয়ে সেখানে । চারি দিকে ঝোপঝাড়, মাঝে বিরাট একটা ভাঙা বাড়ি– এ দেয়াল সে দেয়াল বেয়ে জল প’ড়ে ছাতলা ধরে গেছে। বড়োপিসিমা বললেন, ‘ও গুছু, এ কোথায় নিয়ে এলি ? এখানে থাকব কী করে ? বাবামশায় বললেন, ‘এই দেখে-না দিদি, কদিনেইsসব ঠিক করে ফেলছি।’ মাঝে ছিল দুখানি বড়ো হল, পাশে ছোটোবড়ো নানা আকারের ঘর, ওরই মধ্যে যে কয়টি বাসযোগ্য, ঘর পেলেন তাতেই পিসিমারা সব গুছিয়ে নিয়ে বসলেন । এ দিকে লোক লেগে গেল চার দিক মেরামত করতে। বাবামশায়ের ইঞ্জিনিয়ার ছিল অক্ষয় সাহা । বাবামশায় নিজের হাতে প্ল্যান করে করে অক্ষয় সাহার হাতে দেন, তিনি আবার প্ল্যান দেখে দেখে তা তৈরি করান। সেই খাতাটি আমি রেখে দিয়েছি, পলতার বাগানের প্ল্যান তাতে ধরা আছে। দেখতে দেখতে সমস্ত বাগানের চেহারা গেল ফিরে । ফোয়ার বসল, ফটক তৈরি হল, লাল রাস্ত একেবেঁকে ছড়িয়ে পড়ল। বন হয়ে উঠল উপবন । পুরোনো যে বাড়িটা ছিল সেটা হল বৈঠকখানা । সেখান থেকে হাত-পঞ্চাশেক দূরে অন্দরমহল উঠল। বৈঠকখান থেকে বেরিয়েই একটি তারের গাছম্বর— নানারকম গাছ, অকিড ফুল, তারই মাঝে নানা জাতের পাখি ঝুলছে। সেখান, থেকে লাল রাস্তাটি, খানিকট এগিয়ে ফোয়ার বসানো হয়েছে মাঝখানে, ९२४
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।