ওঠে মন । বলি, আর কেন, নিয়ে যা একে এ ঘর থেকে।’ সেই আয়নার সামনে থাকত টিউলিপস্কুলের ফুলদানিটি, বরাবর দেখেছি তা । মাঝে একবার এক চাকর সেটি বাজারে নিয়ে গেছে বিক্রি করতে। আর-একটি চাকর খোজ পেয়ে তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে আনে। আমি বললুম, ও পারুল, এটা যত্নে তুলে রাখে। এ কী জিনিস, তা তোমরা বুঝবে না, মা চুল বাধতে বসতেন, টিউলিপস্কুলের ছায়া আর মার মুখের ছায়৷ এই দুটি ছায় পড়ত আয়নাতে।' এখনো যেন দেখতে পাই সেই ছবি । সোনালি পাতা দুটি এখনো তেমনি বক্বক্ করছে। আমার বাল্যস্মৃতিতে এই টিউলিপফুল ও আয়নার কাহিনী আরো স্পষ্ট লেখা আছে। আর অন্য ফুলদানিটি ছিল ক্র্যাকৃড, চায়ন, সবুজ রঙ, তার গায়ে হাতে-আঁকা নীল হলুদ দুটি পাখি আর লতাপাত কয়েকটি । ভারি সুন্দর সেই ফুলদানিটি, থাকত বাবামশায়ের আয়নার টেবিলে । সেটি গেল শেষটায় বউবাজারে, কী হল কে জানে ! বাবামশায় তো এমনি করে বাগানবাড়ি ঘর সাজাচ্ছেন। আমরা ছোটো, কিছু তেমন জানি নে, বুঝি নে। থাকতুম অন্দরমহলে। মাঝে মাঝে ঈশ্বরবাবু বেড়াতে নিয়ে যেতেন গঙ্গার ধারে বিকেলের দিকে । রাস্তাঘাট তখন ছিল না তেমন । এখানে ওখানে মড়ার মাথার খুলি । চলতে চলতে থমকে দাড়াই। ঈশ্বরবাবু বলেন, ছুয়ো-টুয়ে না, ভাই, ও-সব। আমরা একটা ডাল বা কঞ্চি নিয়ে খুলিগুলি ঠেলতে ঠেলতে গঙ্গায় ফেলে দিয়ে বলি, যা, উদ্ধার পেয়ে গেলি। ওই ছিল এক খেলা। ছ বেলা হেঁটেই বেড়াতুম।’ সেই সময়ে পলতার বাগানে একবার ঠিক হয়, দাদা বিলেতে যাবেন। সাজ-পোশাক সব তৈরি করবার ফর্মাশ গেল কলকাতায় সাহেব দজির দোকানে । বাবামশায় বললেন, ‘মেজদা আছেন বিলেতে, গগন বিলেত যাক । সতীশ আছে জর্মনিতে, সমর সেখানে যাবে ।’ আমাকে দেখিয়ে বড়োপিসিমাকে বললেন, ‘ও থাকুক এখানেই। আমার সঙ্গে ঘুরবে, ইণ্ডিয়া দেখবে, জানবে।" তখন থেকেই সকলে আমার বিস্তেবুদ্ধির আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। বুঝেছিলেন, ও-সব আমার হবে না। বিদেশ তো যাওয়াই হল না, এ দেশেও আর বাবামশায়ের সঙ্গে ঘোরা হয় নি। তবে বাবামশায় যে বলেছিলেন, ‘ইণ্ডিয়া দেখবে জানবে’, তা হয়েছে। ভারতবর্ষের যা দেখেছি চিনেছি তিনি থাকলে খুশি হতেন দেখে । RR 8 *
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৪১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।