পরে বুড়ি নাতনির পায়জোর পরে উড়নিটি গায়ে জড়িয়ে সভায় ঢুকল। একজন সারেঙ্গিতে স্বর ধরলে। বুড়ি সারেঙ্গির সঙ্গে নাচ আরম্ভ করলে । বলব কী, গে কী নাচ । এমন ভাবে মাটিতে পা ফেলল, মনে হল যেন কাপেট ছেড়ে দু-তিন আঙল উপরে হাওয়াতে পা ভেসে চলেছে তার। অদ্ভুত পায়ে চলার কায়দা ; আর কী ধীর গতি । জলের উপর দিয়ে হঁটিল কি হাওয়ার উপর দিয়ে বোঝা দায়। বুড়ির বুড়ো মুখ ভুলে গেলুম, নৃত্যের সৌন্দর্য তাকে সুন্দরী করে দেখালে । আর-একবার ব্লণ্টি, সাহেব, উডরফ সাহেব, আমরা কয়েকজন দেশসংগীতের অনুরাগী মিলে মাদ্রাজ থেকে একজন বীনকারকে আনিয়েছিলুম। সপ্তাহে সপ্তাহে রাত নটার পরে আমাদের বাড়িতে সেই বীনকারের বৈঠক বসত। সাহেব-স্ববোদের জন্য থাকত কমলালেবুর শরবত, আইসক্রিম, পান-চুরুটের ব্যবস্থা । রাত্তিরে শহরের গোলমাল যখন থেমে আসত, বাড়ির শিশুরা ঘুমিয়ে পড়ত, চাকরদের কাজকর্ম সারা হত, চার দিক শাস্ত, তখন বীণা উঠত বীনকারের হাতে। কাইজারলিঙও একবার এলেন সে আসরে। বানকার বীণা বাজিয়ে চলেছে, পাশে কাইজারলিঙ স্থির হয়ে চোখ বুজে ব’লে, চেরে দেখি বাজনা শুনতে শুনতে তার কান গাল লাল টকৃটকে হয়ে উঠল। স্বরের ঠিক রঙটি ধরল সাহেবের মনে । ঝাড়া একটি ঘণ্টা পূর্ণচন্দ্রিক রাগিণীটি বাজিয়ে বানকার বিন রাখলে । মজলিস ভেঙে আর কারো মুখে কথা নেই, আস্তে আস্তে সব ষে যার বাড়ি ফিরে গেলেন । br জোড়াসাকোর বাড়ির দোতলার দক্ষিণের বারান্দ–পুরুষানুক্রমে আমাদের অমিদরবার, বসবার জায়গা ; প্রকাণ্ড বারান্দা, পুব থেকে পশ্চিমে বাড়িসমান লম্ব দৌড় । তারই এক-এক খাটালে এক-একজনের বসবার চৌকি, সে চৌকি নড়াবার জো ছিল না । ঈশ্বরবাবুর এক, নবীনবাবুব এক, ছোটোপিসেমশায়ের এক, বড়োপিসেমশায়ের এক, নগেনবাবুর এক, কালাৰ্চাদবাবুর এক, অক্ষয়বাবুর এক, বৈকুণ্ঠবাবুর এক, বাবামশায়ের এক —এমনি সারি সারি চৌকি ছ দিকে । এর সকলেই এক-এক চরিত্র, এরা অনেকে বাইরের হয়েও একেবারে জোড়াসাকোর ঘরের মতো ছিলেন। বাবামশায়ের পোষী কাকাতুয়ার পর্যন্ত একট। ミ\9>
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৪৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।