বাড়ির উত্তর আঙিনাটায় একটা গোল চক্কর ছিল তখন— এখন সেখানে মন্ত লালবাড়ি উঠে গেছে। এই চক্করের পুত্ব পাশে আর-একটা আধা গোল গোছের চক্কর ; পশ্চিম পাশে আর-একটা চৌকোন পাচিল-ঘেরা বাগান। এই ক’টা ঘিরে আস্তাবল, নহবতখান, গাড়িখানা । তিনটে বড়ে বড়ো বাদাম আর অনেক কালের পুরোনো তেঁতুলগাছ একটা । এই গাছ ক'টার ফাকে ফঁাকে টানা উচুনিচু সব পাকাবাড়র ছাত আর চিলে-কোঠা। সরু সরু কাঠের থাম দেওয়া, ঝুকে-পড় বারান্দা দেওয়া রামচাদ মুখুজ্যের সাবেক বাড়ি— গরাদে আঁট ছোটো ছোটো জানলা, ইট বার-করা ছাতের পাচিল আর দেওয়াল। উত্তরের এইটুকুর মধ্যে ধরা তখন বাইরের দৃশু-জগৎটি আমার, বাকি দিনগুলো শোনা আর কল্পনার মধ্যে ছিল। বহির্জগতের খিড়কি দিয়ে, উ কি দিয়ে দেখার মতে ছবিগুলো । মানুষ, মুরগি, হাস, গাড়িঘোড়া, সহিস, কোচম্যান, ছির মেথর, নন্দ ফরাশ, গোবিন্দ খোড়া, বুড়ে জমাদার, ভিস্তি, মুটে, উড়ে বেহার, গোমস্ত, মুহুরি, চৌকিদার, ডাকপেয়াদী— সবাইকে নিয়ে মস্ত একটা যাত্র চলেছে এই উত্তরের আঙিনাটায়। সকাল থেকে ঘুমের ঘড়ি না পড়া পর্যস্ত কত কী মজার মজার ঘটনা ঘটে চলেছে দেখতেম এই দিকটাতে । কতক সুরকির রাস্তায়, কতক গোল চাকলার মধ্যেটায়, কতক বা খোলার ঘরগুলোর ভিতরে এবং বাহিরে, অথবা কোনো বাড়ির ছাতে অনেক দূরে । চলতি-ভাষায় যেন একটা চলনসই নাটক দেখছি। খুব বড়ো ট্র্যাজেডি কি কমেডি নয়, কিন্তু কতক নড়াচড়া, কতক হাবভাব, কতক বা একটা ছবি— এই দিয়ে ভরতি একটা প্রহসন দেখছি বলতে পারি। সকালে চোখ খোলা থেকে আরম্ভ করে রাত দশটায় চোখের পাতা বন্ধ করা পর্যস্ত একটা বড়ো নাটক দেখার মতো ছুটি নেই এখন, কিন্তু এটুকু অবসর পেয়েছিলেম তখন। নিত্য নতুন উত্তরচরিতের এক-এক আস্কের মতে— এই নাটক শুরু হত এবং শেষ হত যেভাবে তার একটু হিসেব দিই। তখনো বাড়িতে জলের বল বসে নি। রাস্তার ধারে ধারে টান নহর বয়ে কলের জল আসে । রোগুই দেখি এক ভিস্তি, গায়ে তার হাত-কাটা নীল জাম, কোমরে খানিক লাল শালু ওড়ানে, মাথায় পেস্ট অফিসের গম্বুজের মতে। উচু শাদা টুপি— নহরের পাশে দাড়িয়ে চামড়ার মোষোকে ভল ভরে। মেষ YWe
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।