পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উঠে এগিয়ে এসে দাড়ালেন, ‘আমারও গায়ের মাপট নিয়ে নাও, একটা সদরী – পুজো আসছে বলে বাবামশায়ের দিকে তাকান। বড়োবাজারের পাঞ্জাবী শালওয়াল বসে আছে নানারকম জরির ফুল দেওয়া ছিট, কিংখাবের বস্তা খুলে। বাবামশায়ের পছন্দমত কাপড় কাটা হলে অমনি নবীনবাৰু বলতেন, ‘বাবা, আমার নলিনেরও একটা চাপকান হয়ে যাক এই সঙ্গে ’ আতরওয়াল এসে হাজির, গেব্রিয়েল সাহেব ; আমরা বলতুম তাকে গিব্রেল সাহেব— একেবারে খাস ইহুদি— যেন শেক্সপিয়রের মাৰ্চেণ্ট অব ভেনিসের শাইলকের ছবি জ্যাস্ত হয়ে নেমে এসেছে জোড়াসাকোর দক্ষিণের বারান্দায় ইস্তাম্বুল আতর বেচতে— হুবহু ঠিক তেমনি সাজ, তেমনি চেহারা। গিত্রেল সাহেবের ঢিলে অচিকান, হাতকাটা আস্তিন, সরু সরু একসার বোতাম বিকৃঝিকৃ করছে ; ঔরঙ্গজেবের ছবিতে একে দিয়েছি সেরকম । সে আতর বেক্ষতে এলেই ঈশ্বরবাবু অক্ষয়বাবু সবাই একে একে খড়কেতে একটু তুলে জড়িয়ে বলতেন ‘দেখি, দেখি,কেমন আতর’, ব’লে আতরে ডুবিয়ে কানে গুজতেন । পুজোর সময় আমাদের বরাদ্ধ ছিল নতুন কাপড়, সিস্কের রুমাল। সেই রুমালে টাকা বেঁধে রমানাথ ঠাকুরের বাড়িতে পুজোর সময় যাত্রাগানে প্যাল দিতুম। বলিনি বুঝি সে গল্প ? হবে, সব হবে, সব বলে যাব আস্তে আস্তে । নন্দ ফরাসের ফরাসখানার মতো পুরোনো গুদোমঘর বয়ে বেড়াচ্ছি মনে । কত কালের কত জিনিসে ভরা সে ঘর, ভাঙাচোর দামি-অদামিতে ঠাসা । যত পারো নিয়ে যাও এবারে — হালকা হতে পারলে আমিও যে বাচি — হ্য", সেই সিল্কের রুমাল গিব্রেল সাহেবই এনে দিত। আর ছিল বরাদ্ধ সকলের ছোটো ছোটো এক-এক শিশি আতর। কত রকম লোক আসত, কত রকম কাগু হত ওই বারান্দায় । একবার মাইক্রস্কোপ এসেছে বিলেত থেকে, প্যাকিং বাক্স খোলা হচ্ছে। কী ঘাস দিয়ে যেন তারা প্যাক করে দিয়েছে, বাক্স খোলা মাত্র বারাও স্বগন্ধে ভরপুর। ‘কী ঘাস, কী ঘাস বলে মুঠো মুঠে ঘাস ওখানে যারা ছিলেন সবাই পকেটে পুরলেন। বাড়ির ভিতরেও গেল কিছু, মেয়েদের মাথা ঘষার মসলা হবে। মাইক্রস্কোপ রইল পড়ে, ঘাস নিয়ে মাতামাতি, দেখতে দেখতে সব ঘাস গেল উড়ে। আমিও এক ফাকে একটু নিলুম, বহুদিন অবধি পকেটে থাকত, হাতের মুঠোয় নিয়ে গন্ধ শুকতুম । ২৩৩