তার পর আর-একবার এল ওই বারান্দায় এক রাক্ষস, কাচা মাংস খাবে। সকাল থেকে ষন্থ মাস্টার ব্যস্ত, আমাদের ছুটি দিয়ে দিলেন রাক্ষস দেখতে । ‘দেখবি আয়, দেখবি আয়, রাক্ষস এসেছে বলে ছেলের দল গিয়ে জুটলুম সেখানে। মা পিসিমারাও দেখছেন আড়ালে থেকে খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে। ছেলে বুড়ে সবাই সমান কৌতুহলী। রাবণের গল্প পড়েছি, সেই দেশেরই রাক্ষস । কৌতুহল হচ্ছে দেখতে, আবার ভয়-ভয়ও করছে। ‘এসেছে এসেছে, আসছে আসছে রব পড়ে গেল । বাবামশায়ের পোষা খরগোস চরে বেড়াচ্ছে বারান্দায় — কেদারদা চেচিয়ে উঠলেন, ‘খরগোসগুলিকে নিয়ে যা এখান থেকে, রাক্ষস খেয়ে ফেলবে । শুনে আমরা আরো ভীত হচ্ছি, না জানি কী । খানিক পরে রাক্ষস এল, মাতুষ– বিশ্বেশ্বরের মতোই দেখতে রোগাপটকা অতি ভালোমাতুষ চেহারা— দেখে আমি একেবারে হতাশ । চাকররা একটা বড়ো গয়েশ্বরী থালাতে গোটা একটা পাঠা কেটে টুকরো টুকরো করে নিয়ে এল রান্নাঘর থেকে । সেই মাংসের নৈবেদ্য সামনে দিতেই খানিকট হন মেখে লোকট। হাপ হাপ, করে সব মাংস খেয়ে টাকা নিয়ে চলে গেল। সেই এক রাক্ষস দেখেছিলেম ছেলেবেলায়, কাচাখোঁর । সেকালের লোকদের ছোটে-বড়ে সবারই এক-একটা চরিত্র থাকত। অক্ষয় বাৰু আসতেন ফিট্ফাট বাবুট সেজে। তার কথা তে অনেক বলেছি আগের সব গল্পে। সে সময়ে ফ্যাশান বেরিয়েছে বুকে মড়মড়ে-পেলেট-দেওয়া চোস্ত ইস্তিরি-করা শার্ট, তাহ গায়ে দিয়ে এসেছেন অক্ষয়বাৰু। কালো রঙ ছিল তার, বাবরি চুল, গোফে তা, কড়ে আঙলে একটা আংটি। গানও গাইতেন মাঝে মাঝে, খুব দরাজ গল ছিল। গান কিছু বড়ো মনে নেই, স্বরটাই আছে কানে এখনো বড়ো বড়ে রাগরাগিণীর – আমি তখন কতটুকুই-বা, ছয়-সাত বছর বয়স হবে আমার। এখন, অক্ষয়বাৰু তো বসে আছেন চৌকিতে সেই নতুন ফ্যাশানের পেলেট দেওয়া শার্ট গায়ে দিয়ে। আমি কাছে গিয়ে অক্ষয়বাবুর বুকের মড়মড়ে পেলেটে হাত বোলাতে বোলাতে বললুম, ‘অক্ষয়বাবু, এ যে শাসি খড়খড়ি লাগিয়ে এসেছেন । যেমন বল বারান্দামৃদ্ধ সকলের হো-হে হাসি, শার্সি খড়খড়ি। হাসি শুনে ভাবলুম কী জানি একটা অপরাধ করে ফেলেছি। চোচা দৌড় সেখান থেকে । বিকেলে আবার শুনি, সেই আমার শাসি খড়খড়ি পরার কথা নিয়ে হাসি হচ্ছে সবাইকার। 3g
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।