কর্তামশায় এসেছিলেন, বলেছি তো সে গল্প—তাড়াহুড়ে, দেউড়ি থেকে উপর পর্যন্ত বাড়পোছ, যেন বর আসছেন বাড়িতে। জোড়াসাঁকোর বাড়ির দক্ষিণ বারান্দার আবহাওয়া, এ যে কী জিনিস । সেই আবহাওয়াতেই মানুষ আমরা । এ-বাড়ির যেমন দক্ষিণের বারান্দ ও-বাড়িরও তেমনি দক্ষিণের বারান্দা। পিসিমাদের মুখে শুনতুম, ও-বাড়ির দক্ষিণের বারান্দায় বিকেলে যখন দাদামশায়ের বৈঠক বসত তখন জুই আর বেলফুলের স্বগন্ধে সমস্ত বাড়ি পাড়া তরু হয়ে যেত। দাদামশায়ের শখ, বসে বসে ব্যাটারি চালাতেন। জলে টাকা ফেলে দিয়ে তুলতে বলতেন। একবার এক কাবুলিকে ঠকিয়েছিলেন এই করে। জলে টাকা ফেলে ব্যাটারি চার্জ করে দিলেন । কাৰুলি টাকা তুলতে চায়, হাত ঘুরে এ দিকে ও দিকে বেঁকে যায়, টাকা আর ধরতে পারে না কিছুতেই। তার পর জ্যাঠামশায়ের আমলে তিনি বসলেন সেখানে । কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য, বড়ো বড়ো পণ্ডিত ফিলজফার আসতেন। স্বপ্নপ্রয়াণ পড়া হবে, এ বারান্দা থেকে ছুটলেন বাবামশায়রা সে বারান্দায়। থেকে থেকে জ্যাঠামশায়ের হাসির ধ্বনি পাড়া মাত করে দিত। সে হাসির ধুম আমরাও কানে শুনতুম। তার পর আমাদের আমলে যখন বাড়ির দক্ষিণের বারান্দায় বৈঠকে বসবার বয়স হল তখন সেকালের যারা ছিলেন—মতিবাবু, অক্ষয়বাবু, ঈশ্বরবাবু, নবীনবাবু—আর দাদামশায়ের বৈঠকের একটি বুড়ে, কী মুখুজ্যে, নামটা মনে আসছে ন, তার ছবি আঁকা আছে, চেহারা গান গলার স্বর সব ধরা আছে মনে, নামটা এরই মধ্যে হারিয়ে গেল—তিনি গাইতেন দাদামশায়ের বৈঠকখানায়, মাঝে মাঝে আমাদেরও গান শোনাতেন, দাদামশায়ের গল্প বলতেন— এই তিন কালের তিন-চারটি বুড়ে নিয়ে আমরা তিন ভাই বৈঠক জমালেম। সেই দক্ষিণের বারান্দাতেই ঠিক তেমনি ছকে কলকে ফরসি সাজিয়ে বসি । বাবামশায় যেখানে বসতেন সেখানে দাদা বসে ছবি আঁকেন, একটু তফাতে আমি বসি পুবের বড়ো খিলেনের ধারে, তার পর বসেন সমরদ । আমাদের বৈঠকেও সেইরকম শালওয়াল আসে, নতুন নতুন বন্ধুবান্ধব আসে। সামনের বাগানে সেই-সব গাছ ; দাদামশায়ের হাতে পোত নারকেল গাছ, কঁঠাল গাছ। বাবামশায়ের শখের বাগানে সেই কোয়ারায় জল ছাড়ে, সেই ভাগবত মালী, সব দেখা যায় বারান্দায় বসে । বিকেলে পাথর-বাধানে গোল চাতালে বসি, శి\9tు
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৫৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।