কাচের ফরসিতে সেই গোলাপজলে গোলাপপাপড়ি মিশিয়ে তামাক টানি । কাল বদলেও যেন বদলায় নি, তিন পুরুষের আবহাওয়া খানিক-খানিক বইছে তখনে দক্ষিণের বারান্দায়। ড্রামাটিক ক্লাবের শ্রাদ্ধ হবে, সেই বারান্দায় লম্বা ভোজের টেবিল পড়ল। লম্বা উর্দি পরে সেই নবীন বাৰুচি সেই বিশ্বেশ্বর স্থ কোবরদার দেখা দিল, সেই-সব পুরোনো ঝাড়লণ্ঠনের বাতি জলল, প্লেট গ্লাস সাজানো হল । তিন পুরুষের সেই-সব গানের স্বর এসে মেশে আবার নতুন নতুন গানের সঙ্গে, রবিকার গানের সঙ্গে, দ্বিজুবাবুর গানের সঙ্গে । আরো হলে আমলে যখন আমরা আর্টিস্ট হয়ে উঠেছি, আর্ট সোসাইটির মেম্বর হয়েছি, বড়ে বড়ো সাহেবস্থবো জজ ম্যাজিস্ট্রেট লাট আসেন বাড়িতে— কমলালেবুর শরবত, পান তামাক, বেলফুলে ভরে যায় সেই দক্ষিণের বারান্দ । বারান্দার পাশের বড়ে স্ট ডিয়োতেই বীনকারের বাণ গভীর রাত্রে থেমে যায় সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়ে। আবার যখন বাড়িতে কারো বিয়ে, লৌকিকতা পাঠাতে হয়, মেয়ের থালা সাজিয়ে দেয় ; সেই সৎগীতের থালায় থালায় ভরে যায় সেই লম্বা বারান্দা । তোমরা ভাব ঘরের ভিতরে স্ট ডিয়োতে বসে ছবি আঁকতুম, তা নয়। বারান্দার এক দিকে আমি আর-এক দিকে ছাত্ররা বসে যেত। মুসলমান ছাত্র আমার শমিউজ্জমা এক দিকে আসন পেতে বসে সারা দিন ছবি আঁকে, সন্ধ্যা হলে মক্কামুখো হয়ে নামাজ পড়ে নেয় ওই বারান্দাতেই। অবারিত স্বার দক্ষিণের বারান্দায় ; সবাই আসছে, বসছে, ছবি অ’লছি, গান চলছে, গল্পও হচ্ছে । এমনি করেই ছবি একে অভ্যস্ত আমি । অবিনাশ পাগলা সেও আসে, কত রকম বুজরুকি দেখাতে লোক আনে। একদিন একটা লোক ফু দিয়ে গোলাপের গন্ধ বাড়িময় ছড়িয়ে চলে গেল। বারান্দা যেন একটা জীবস্ত মিউজিয়াম । নানা চরিত্রের মাহুষ • দেখতে রাস্তায় বেরোতে হত না, তারা আপনিই উঠে আসত সেখানে । পূর্ণ মুখুজে, মাথায় চুল প্রায় ছিল না, চাচাছোলা নাক-মুখের গড়ন। তিনি মারা যাচ্ছেন ; মাকে বলে পাঠালেন, ‘মা, আমি গঙ্গাঘাত্রা করব । মা আমাদের বললেন, ‘বন্দোবস্ত করে দে।” আমরা বন্দোবস্ত করে দিলুম। মারা গেলে যেভাবে নিয়ে যায় সেইভাবে বঁাশের খাটিয়া এনে তাকে তাতে শুইয়ে নিয়ে চলল। তেতলা থেকে মা’র দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছেন, দোতলার বারান্দ থেকে ২৩৭
পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৫৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।